কন্যা সন্তানকে আগে থেকেই সতর্ক করছেনতো….

                          ……মাসিক নিয়ে আর  নয় গোপনিয়তা।

 

♣সাধারণত পিরিয়ডের অ্যাভারেজ বয়স ধরা হয় ১২ বছর (আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ড)। কিন্তু এই বয়সেই সবার প্রথম পিরিয়ড হবে বিষয়টা এমন না। সাধারণত ১২ বছর বয়সে বেশিরভাগ মেয়ে শিশুদের পিরিয়ড হয়ে যায়। কিন্তু অনেকের এর আগেও হয়, অনেকের পরেও হয়। ৮ বছর বয়সেও অনেকের হতে পারে, আবার অনেকের ১৫ বছর বয়সেও হতে পারে। বিভিন্ন শিশুর মেচিউরিটি বিভিন্ন সময়ে হয়ে থাকে।এতে ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই।

1. শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লোম দেখা দেয়া এই সময়ে অনেক কমন একটা লক্ষণ        2.  স্তন কিছুটা দৃশ্যমান হতে শুরু করবে।
3. প্রথম পিরিয়ডের ৬-১২ মাস আগে থেকে মেয়েশিশুদের যৌনাঙ্গ দিয়ে অল্প অল্প তরল নির্গমন হবে। 

♣এটি একটা স্বাভাবিক শরীর বৃত্তিয় প্রক্রিয়া, যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিটা নারীকেই যেতে পারে। সেজন্য শুরুতেই এটাকে স্বাভাবিকভাবে নেয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। আপনার নিজের এই সময়টাকে কল্পনা করতে পারেন। আপনি পরিবারের পক্ষ থেকে কেমন সমর্থন পেয়েছেন এই সময়ে? সেই সমর্থনটা আপনাকে কতটা নির্ভার ও সাহায্য করতে পেরেছে? সেটিই আপনার সন্তানের জন্য উপযুক্ত কী না? নাকি আপনি আরো ভালোভাবে আপনার সন্তানকে এই সময়ে সমর্থন দিতে চান! এই ভাবনাগুলোর জায়গায় আগে নিজেকে পরিষ্কার করুন।শুরুতেই তাকে তার বয়ঃসন্ধিকাল সম্পর্কে অবগত করুন। এরপর পিরিয়ড নিয়ে একটা ধারণা দিন। পিরিয়ড কী? কেন হয়? এই সময়ে সে কেমন অনুভূতির মধ্য দিয়ে যায়।

♠এইটা যে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোন বিষয় না, খুবই স্বাভাবিক ও সহজ একটা বিষয় তা তাকে আগে থেকেই জানিয়ে রাখুন। সাধারণত বাংলাদেশে সব পরিবারেই এই বিষয়গুলো পরিবারের কোন নারীরাই দেখে থাকেন। তাই বলে পুরুষদের এইসব বিষয় নিয়ে জানতে হবে না এমন কোন কথা নেই। বাবাদের/ভাইয়েদের সচেতন হওয়াও এই সময়ে অনেক জরুরী। সচেতন হোন, একটু পড়ালেখা করে এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে রাখুন। এরপর প্রয়োজন হলে আপনার সন্তানের সাথে কথা বলুন।  নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন।

পিরিয়ড যে কোন সময় হতে পারে। শুধু বাসায় থাকাকালীনই হবে বিষয়টা এমন না। বাসার বাইরে, স্কুলে, কোন স্কুল ট্রিপে, যে কোথাও, যে কোন সময় প্রথম পিরিয়ড হতে পারে। সেক্ষেত্রে কন্যা সন্তানকে জানিয়ে রাখুন এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়ার সাথে সাথে সে প্রথমে কার কাছে যাবে! স্কুলে হলে স্কুলের কোন ম্যামকে আগে থেকে জানিয়ে রাখুন ও আপনার সন্তানকেও জানিয়ে রাখুন স্কুলের ম্যামের কথা। সোজা কথা তাকে কিছু মানুষের সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা দিয়ে রাখা, সে যেন কোনভাবেই আতঙ্কিত না হয়ে তাদের কাছে গিয়ে বিষয়টা অবহিত করে।স্কুলের ব্যাগে বাইরে কোথাও গেলে কয়টি প্যাড লাগতে পারে সে হিসেব করে প্যাড রেখে দিন। অতিরিক্ত প্যাড, আন্ডারওয্যার ইত্যাদি রাখতে পারেন। বেশি পেইনের জন্য পেইন কিলারও রাখা যেতে পারে। তার পছন্দের খাবার প্যাক করে রাখতে পারেন তাতে।তবে এই সময়ে বেশী পরিমান মাংস জাতীয় খাদ্য না খাওয়াই ভালো।আইরন জাতীয় খাবার ।একজন নারীর প্রতিদিন ১৫ মিলিগ্রাম আয়রন খাওয়া প্রয়োজন।

পালং শাক ,টমেটো  ,মটরশুঁটি   ,শিমের বীচি , মাছ (স্যামন, সার্ডিন, কুটেল মাছে আয়রন থাকে। এ ছাড়া স্যামনের মধ্যে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড,সিদ্ধ আলু (খোসা সহ একটি সিদ্ধ আলুতে ৩ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে।),কালো চকলেট,ইত্যাদি।সিদ্ধ আলুতে ভিটামিন সি, বি ভিটামিন, প্রচুর পটাশিয়াম থাকার পাশাপাশি উচ্চমাত্রার আয়রন থাকে। খোসা সহ একটি সিদ্ধ আলুতে ৩ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। শরীরে আয়রন যাতে ঠিকমত শুষিত হয় তার জন্য আয়রন জাতীয় খাবারের সাথে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- কমলা, স্ট্রবেরি, ব্রকলি ইত্যাদি খেতে হবে। 

পারসোনাল হাইজেন সম্পর্কে সচেতন করুন।  অসচেতনার কারণে জরায়ুতে ক্যান্সারসহ অনেক ভয়াবহ সমস্যা হতে পারে। সেজন্য এই সময়ে হাইজেন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ৫-৬ ঘন্টা পর প্যাড চেঞ্জ করা, পিরিয়ডের সময় প্রতিদিন ভালোভাবে গোসল করা ইত্যাদি অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচাবে। স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে একদম ভালোভাবে কথা বলতে হবে এই সময়ে। পশ্চিমের আধুনিক সমাজেও  মেয়েরা পিরিয়ডের সময় দোকানে গিয়ে স্যানেটারি প্যাড চাইতে দ্বিধাবোধ করে। প্যাড চেঞ্জ করার জন্য কারো সাহায্য নিতে দ্বিধাবোধ করে। সুতরা আলোচনার মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করাটা অনেক বেশি জরুরী।

পিরিয়ডের সাথে মুড সুইং, বিষণ্ণতা, হতাশা, মানসিক বিষাদ, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া এমন কিছু জড়িয়ে আছে। প্রথম পিরিয়ডে এইসব বোঝার মতো পরিণত আপনার সন্তান হয়না। তখন তার কাছে ব্লিডিং আর তলপেটে ব্যাথাই দৃশ্যমান। তাকে শুধু এই দুটো সম্পর্কে জানিয়ে রাখুন। যেগুলো তার বয়সের সাথে সম্পর্কিত না সেগুলো জানালে তার আতঙ্কই বাড়বে। তবে হ্যাঁ একটু পরিণত হওয়ার সাথে সাথে আপনি তাকে এই বিষয়গুলোও জানাতে পারেন।পিরিয়ড আপনার সন্তানের জন্য একটা মাইলফলক। পিরিয়ড প্রমাণ করে আপনার কন্যা সন্তানটি বড় হচ্ছে, ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছে। এই বিষয়টি তাকে বুঝান।পিরিয়ডকে যাতে সে নরমাল একটি বিষয় হিসেবেই দেখে।

Related Posts

10 Comments

মন্তব্য করুন