করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ১০টি সতর্কবার্তা

গত ২০১৯ এর ডিসেম্বরে চীনে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণের পরে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস। এখন এই করোনাভাইরাস আন্তর্জাতিক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কোভিড-১৯ নামে এই করোনা ভাইরাস অফিশিয়াল ভাবে পরিচিত। এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে সারা বিশ্বে ৯৩ হাজারেরও অধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে ও ৩ হাজার ২৮৫ জন এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছে। ভাইরাসটিতে অধিকাংশ মানুষই চীনে মারা গেছে। তবে গত দুই সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসের বেশ প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি এই ভাইরাসে আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকা থেকেও আক্রান্তের খবর আসছে।
 
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন ভয়াবহ এই করোনার বিরুদ্ধে এশিয়ার দেশগুলো কিভাবে মোকাবিলা করছে সেই সম্পর্কিত ১০টি তথ্য তুলে ধরেছে। করোনা ভাইরাসের মহামারি প্রতিরোধে পূর্বসতর্কতা স্বরূপ এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যমটি।
 
জনগণের কাছে সঠিক তথ্য উপস্থাপন

সরকারের জবাবদিহিতা ও দেশের জনগণকে সঠিক তথ্য অবগত করার ব্যাপারে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। অর্থাৎ দেশের জনগণকে এ ভাইরাসের ঝুঁকি সম্পর্কে আগে থেকে জানিয়ে রাখলে রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সবাইকে সহযোগিতা করবে। জাপানের এক স্থানীয় গণমাধ্যমের মতে, খুব ভালোভাবে স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টির কারণে জাপানে এ রোগ আক্রান্তের সংখ্যা বেশ কমে যাচ্ছে।

সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি

আক্রান্ত মানুষের শারীরিক সংস্পর্শ থেকেও করোনা ভাইরাস ছড়ায়। এজন্য সরকার ও জনগণকে  অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যে পদক্ষেপটি নিতে হবে তা হলো সামাজিক দূরত্ব তৈরি করা। 
সামাজিক দূরত্ব বলতে যা বোঝায় তাই। নিজ ও অন্য মানুষের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখা ও যেখানে গেলে অনেক বেশি লোকের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা থাকে সেইরকম পরিস্থিতি গুলো যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।

আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা

ভাইরাসটি বড় ভাবে সংক্রমণ ছড়ানোর পূর্বেই প্রশাসনকে এই প্রাদুর্ভাবের জন্য প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন। জানুয়ারি মাসে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দ্রুত এ ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার বিষয় স্পষ্ট হতে বিভিন্ন দেশ প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে। ভাইরাসটি চীনের পর প্রথম থাইল্যান্ডে ছড়িয়ে পরে। এই ভাইরাসে প্রথম জন আক্রান্ত হওয়ার পরদিন থেকেই থাইল্যান্ড ব্যাপকভাবে পরিবহনকেন্দ্র গুলোতে থার্মাল স্ক্যানিং চালু করে দেয়।

যত দ্রুত সম্ভব রোগ পরীক্ষা করা

ভাইরাসটি মোকাবিলায় করোনার প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্রই যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষা করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। এজন্য স্থানীয় পর্যায়ের জেলাসহ সারাদেশ ব্যাপী পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। যাতে কেউ আক্রান্ত হলেই যেন সাথে সাথে জানা সম্ভব হয়।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকে বেশি প্রাধান্য দেয়া

প্রতিবার কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে ভালোকরে সাবান দিয়ে হাত ধৌত করতে হবে। হাঁচিকাশির সময় নাক ও মুখ ঢেকে রাখতে হবে। চোখ মুখে হাত না দেওয়া ও যেসব জায়গা বেশিরভাগ সময় হাত দিয়ে ধরা হয় সেই জায়গা গুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকা।

কর্মীদের কাজের বিষয়ে নমনীয়তা

গত এক মাস যাবত এশিয়ায় লক্ষাধিক মানুষ বাড়িতে থেকে অফিসের কাজ গুলো করছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান খুব বেশি প্রয়োজনীয় নয় এমন ধরণের কর্মীদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। আবার অনেকেই কর্মীদেরকে গ্রুপ করে আসার জন্য সময় ভাগ করে দিয়েছে।
ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে কেনাকাটা করা থেকে বিরত থাকা

গত ফেব্রুয়ারি মাসে হংকং-এ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে কেনাকাটা করে দোকান খালি করার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। সে দেশের প্রশাসন বার বার আশ্বস্ত করার পরেও মানুষ ভেবেছিল যে বর্ডার বন্ধ থাকলে টয়লেট টিস্যু সাপ্লাই হবে না। তাই আগে থেকেই কিনে মজুত রাখতে চেয়েছিল তারা। শুধু যে টয়লেট টিস্যু তা নয় এছাড়াও ফেসমাস্ক সহ বিভিন্ন পরিষ্কারক সামগ্রী ও ভাতের মতো খাদ্যও কিনে রাখা শুরু করেছিল সে দেশের মানুষ।

পোষা প্রাণীদেরকে ভয় পাওয়া থেকে বিরত থাকা

গত সপ্তাহে হংকং-এ এক কুকুরের করোনাভাইরাস টেস্ট করে ফলাফল পজিটিভ আসার কারণে একটি ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে পড়েছিল যে কুকুরও করোনাতে আক্রান্ত হতে পারে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ব্যাপারটি ঠিক তা নয়। কুকুর ও বিড়াল এ ভাইরাসে আক্রান্ত না হলেও এই ভাইরাস এদের ত্বকে উপস্থিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।

আক্রান্ত রোগীদের সাথে খারাপ আচরণ না করা

ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের সাথে সাথে বাড়ছে ভয়, বিড়ম্বনা ও বৈষম্য। এজন্য বিশেষজ্ঞরা রোগীদের সাথে খারাপ আচরণ করা থেকে বিরত থাকার কথা বলেছেন।

আতঙ্কিত হওয়া ও আতঙ্ক ছড়ানো থেকে বিরত থাকা

করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রস্তুতির পাশাপাশি আতঙ্কিত হওয়া ও আতঙ্ক ছড়ানো থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের এক হিসেব অনুযায়ী বলা হয়েছে আক্রান্তদের মধ্যে অর্ধেকের চেয়েও বেশি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

Related Posts

9 Comments

মন্তব্য করুন