কিভাবে সৃজনশীল প্রশ্ন এবং উত্তর লিখবেন

সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি:

শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রচলিত ধারার পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে কাঠামোবদ্ধ শিক্ষা পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। কিন্তু নানা কারণে তা ঠিক থাকেনি। পরে তাকে পরিবর্তন আনা হয়। আগের কাঠামোবদ্ধ পদ্ধতির পরিবর্তিত নাম বর্তমান সৃজনশীল পদ্ধতি। এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। তিনি কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন পদ্ধতির নামটি পরিবর্তন করে সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি করার প্রস্তাব করেন। সংস্কারকৃত এই নিয়মে পুরনো পদ্ধতির রচনামূলক ,সংক্ষিপ্ত, ব্যাখ্যা ইত্যাদি পরিবর্তে সৃজনশীল প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সৃজনশীল মানের নতুন সৃষ্টির চর্চা

, প্রেরণা বা অনুশীলন। প্রকৃত শিক্ষা লাভের জন্য এটি একটি উৎকৃষ্ট পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা তার অর্জিত জ্ঞান থেকে কি শিখছে তা বুঝতে সক্ষম হবে। উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক এর মতে এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা বড়জোর ২০ থেকে ৩০ শতাংশ প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করে দিতে পারবে। বাকি উত্তর টুকু দেওয়ার জন্য তাদের ভাবতে হবে ,কল্পনা করতে হবে নতুন পুরোনো ক্ষেত্রের সঙ্গে তুলনা করতে হবে। সর্বোপরি তাদের সৃজনশীল হতে হবে। কাজেই এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠবে।সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতির নিয়ম অনুসারে শিক্ষকদের প্রথম কাজ হলো একটি যথার্থই ও সুন্দর উদ্দীপক দৃশ্যকল্প অনুচ্ছেদ তৈরি করা। উদ্দীপকটি হবে মৌলিক এবং তা পাঠ্য বিষয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে গল্পের ভঙ্গিতে তৈরি করা মনে রাখতে হবে। উদ্দীপকে সরাসরি কোনো প্রশ্নের উত্তর থাকে না,থাকবে উত্তরের প্রাসঙ্গিক ইঙ্গিত। অর্থাৎ উদ্দীপকের বিষয়বস্তু থেকে উত্তরের ধারণা লাভ করা যাবে সেই ধারণাকে শিক্ষার্থী তার অনুধাবন শক্তি দিয়ে বিচার করে লিখবে। উদ্দীপকের বিষয়কে কেন্দ্র করে জ্ঞান স্তর অনুসারে চারটি প্রশ্ন করা হবে অর্থাৎ প্রতিটি সৃজনশীল প্রশ্নের চারটি অংশে থাকবে এবং সেগুলো হলো:

১.জ্ঞানমূলক অংশ

২.অনুধাবনমূলক অংশ

৩.প্রয়োগমূলক অংশ

৪.উচ্চতর দক্ষতা মূলক অংশ

প্রতিটি উদ্দীপক থেকে প্রশ্ন চারটি অংশের জন্য নম্বর নির্ধারিত থাকবে।যেমন (ক) অংশের জন্য এক নম্বর. (খ) অংশের জন্য দুই নাম্বার (গ) অংশের  জন্য তিন নাম্বার. (ঘ) অংশের জন্য চার নম্বর।

কিভাবে একটি সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরি করা হয়:

পাঠ্য পুস্তকের বিষয়বস্তুর আলোকে পত্র-পত্রিকা চিত্র সমালোচনা গ্রন্থ ম্যাগাজিন সারণির ডায়াগ্রাম রেডিও টেলিভিশনে প্রচারিত কোনো প্রতিবেদন প্রমান্যচিত্র বিজ্ঞাপন এর সাহায্যে উদ্দীপক তৈরি করতে হবে।উদ্দীপকের ভাষা যাতে সহজ-সরল আকর্ষণীয় ও সংক্ষিপ্ত হয় সেদিকে সচেতন থাকা বাঞ্চনীয়।প্রয়োজনীয় শব্দ বা বাক্য পরিহার করতে হবে।পাঠ্য পুস্তকের কোন একটি অধ্যায়ের আলোকে অথবা একাধিক অধ্যায়ের সমন্বয় করে উদ্দীপক তৈরি করা যাবে।কোন ক্রমেই পাঠ্যপুস্তক এর কোন অংশ বা অনুচ্ছেদ সরাসরি উদ্দীপক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। উন্নত মানের উদ্দীপক তৈরি করতে চাইলে একজন শিক্ষককে সর্বপ্রথম পাঠ্যবই এভাবে কয়েকবার পড়তে হবে। তারপর প্রতিটি অধ্যায়ের উদ্দেশ্য এবং শিখনফল বুঝতে হবে ,এরপর ওই অধ্যায়ে বর্ণিত বিভিন্ন দিক খুঁজে বের করতে হবে তাকে যেকোনো একটি বা একাধিক ভাবের আলোকে কাল্পনিক দীপক তৈরি করতে হবে। মনে রাখতে হবে উদ্দীপক তৈরি করে তারপর প্রশ্ন করা যায় অথবা প্রশ্ন তৈরি করে তারপরও উদ্দীপক তৈরি করা যায়।

প্রতিটি সৃজনশীল প্রশ্ন দক্ষতার কাঠিন্যের ক্রম অনুযায়ী লেখা হয় যেমন অংশ (ক) জ্ঞান স্তর (তথ্য স্মরণ করা যাচাই করে) । অংশ (খ) অনুধাবন স্তর (বিষয়বস্তু বুঝো কিনা তা যাচাই করে) অংশ (গ) প্রয়োগ স্তর (অনুধাবন করা ধারণাকে নতুন পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করতে পারে কিনা তা যাচাই করে) অংশ (ঘ) উচ্চতর চিন্তন দক্ষতার স্তর (কোন বিষয় বিশ্লেষণ, সংশ্লেষণ বা মূল্যায়ন করার দক্ষতা যাচাই)

সৃজনশীল প্রশ্ন প্রণয়ন এর কলাকৌশল

এ পদ্ধতিতে সর্বপ্রথম একটু উদ্দীপক তৈরি করতে হবে মনে রাখতে হবে উদ্দীপকে কোনভাবেই কোন প্রশ্নের উত্তর থাকবেনা। বরণ উদ্দীপকটি শিক্ষার্থীকে উত্তরদানে সাহায্য করবে অর্থাৎ উদ্দীপকটি শব্দ শিক্ষার্থীর উদ্দীপনা জাগাবে শিক্ষার্থীকে ভাবতে শিখবে।

জ্ঞান মূলক প্রশ্নের ধরন এবং উত্তর কৌশল:

• জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তর হলো সম্পূর্ণ স্মৃতিনির্ভর এই ধরনের প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের জ্ঞান দক্ষতা যাচাই করা হয়

• জ্ঞানমূলক প্রশ্নের কোনো অধিকার থাকে না উদ্দীপক সংশ্লিষ্ট গদ্য/ কবিতা /উপন্যাস/ নাটক সরাসরি উল্লেখ থাকবে।

• মূল বইয়ে উল্লেখ নেই এমন তথ্য জ্ঞানমূলক প্রশ্ন জানতে চাওয়া হবে

• তাই মূল বই ভালোমতো পড়তে হবে এবং  তথ্যমূলক কোন অংশ খাতায় নোট করে রাখতে হবে

• গদ্য /কবিতার উৎস মূল বক্তব্য এবং শব্দার্থ ও টীকা অংশ ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে।

• প্রতিটি গদ্য কবিতা নাটক কোন সালে রচিত হয়েছে তা ভালোভাবে জানতে হব।

• এই জাতীয় প্রশ্নের ১০০% মূল বই থেকে কমন পড়বে।

অনুধাবনমূলক প্রশ্নের ধরন এবং উত্তর কৌশল

• অনুধাবন বলতে কোন বিষয়ের অর্থ বোঝার ক্ষমতা কে বোঝায়। এই ধরনের প্রশ্ন শিক্ষার্থীকে কোন বিষয়বস্তু সম্পর্কে নিজের ভাষায় ব্যাখ্যা বা বর্ণনা করে দিতে বলা হয়।

• অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উদ্দীপক সংশ্লিষ্ট গদ্য/ কবিতা/ উপন্যাস /নাটক থেকে করা হবে। তবে এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর সরাসরি পাঠ্যবইয়ে পাওয়া যাবে না, উত্তরের জন্য শিক্ষার্থীকে ভাবতে হবে।

• কী বোঝায় /কাকে বলে /কেন এই কথা বলা হয়েছে /কেন এই ঘটনা ঘটেছে -তার ব্যাখ্যা বর্ণনা জাতীয় শব্দে এই ধরনের প্রশ্ন করা হবে । তাই এ জাতীয় শব্দ দিয়ে পাঠ্য বই থেকে যেসব প্রশ্ন হতে পারে সকল প্রশ্ন নিজে আয়ত্ত করতে হবে।

• পাঠ্যভুক্ত কবিতা /গল্প/ উপন্যাস /নাটকের গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্যবহ লাইন ,উক্তি বাছাই করে সেগুলো উপলব্ধি করতে হবে।

• পাঠ্যবইয়ের যে অংশের আলোকে উদ্দীপক তৈরি করা যাবে সাধারণত সে অংশ থেকে অনুধাবনমূলক প্রশ্ন করা হবে তাই সংশ্লিষ্ট অংশটি মূলভাব অনুধাবন করতে পারেন এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সহজ হবে।

• উদ্দীপক যে ধরনেরই হোক না কেন অনুধাবনমূলক প্রশ্ন নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কোন কারণ নেই এ ধরনের প্রশ্নের ১০০% বই থেকে করা হবে

প্রয়োগ মূলক প্রশ্নের ধরন ও উত্তর কৌশল:

• এই জাতীয় প্রশ্নের শিক্ষার্থীর পাঠ্যবই থেকে অর্জিত জ্ঞান ও অনুধাবনমূলক পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করার দক্ষতা যাচাই করা হয়।

• প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীর নিজস্ব মতামত প্রকাশের সুযোগ থাকে তাই এ প্রশ্নের ধরনে শিক্ষার্থীর তার অর্জিত জ্ঞান ও অনুধাবন কাজে লাগিয়ে উদ্দীপক সংশ্লিষ্ট গদ্য/কবিতা/ নাটকে /আলোকে নতুনভাবে উত্তর করতে।

•  এ ধরনের প্রশ্ন মিল/ সাদৃশ্য/ বৈসাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো/ তুলনামূলক সমালোচনা করো এই ক্ষেত্রে তুমি হলে কি করতে/ উদ্দীপকটি  কোন গল্প উপন্যাস বা নাটকের কোন দিকটি নির্দেশ করে/ তোমার দেখা এমন ঘটনা বর্ণনা কর ইত্যাদি প্রশ্নবোধক শব্দ দিয়ে করা হয়।এ জাতীয় শব্দ দিয়ে তোমার পাঠ্য বই থেকে যেসব প্রশ্ন হতে পারে তা ভালভাবে আয়ত্ত করে নিতে হবে।

• প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরে মূলভাব ঠিক রেখে শিক্ষার্থীরা নিজের মতো করে উত্তর দিতে পারবে।

• এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর সহজে কত হলে শিক্ষার্থীকে উদ্দীপক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি আকরামুল অবাস্তব পেক্ষাপটে এনে সাজানোর সক্ষমতাকে অর্জন করতে হবে।

• আপনার প্রশ্নের উত্তরে উদ্দীপক কিংবা উদ্দীপক সংশ্লিষ্ট পাঠ্যবিষয় সরাসরি না থাকলে বক্তব্য বিষয়টির সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা থাকবে ।তাই চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

উচ্চতর দক্ষতা মূলক প্রশ্নের ধরন ও কৌশল

• এটি চিন্তন দক্ষতার চতুর্থ স্তর বা সর্বশেষ স্তর। উচ্চতর দক্ষতা মূলক প্রশ্ন শিক্ষার্থীর পাঠ্যবই থেকে অর্জিত জ্ঞান অনুধাবন নতুন কোনো ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষমতা কে যাচাই করা হয়।

• এ জাতীয় প্রশ্নে- বক্তব্যটি বিশ্লেষণ কর, যাচাই কর, মূল্যায়ন কর, বিচার কর, যথার্থতা নিরূপণ করো, পরামর্শ দাও, আলোচনা কর, পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন কর ইত্যাদি প্রচলিত শব্দ ব্যবহৃত হয়।

• এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন লিখিত বিষয় সম্পর্কিত তথ্য বা উপাত্ত জানা থাকতে হবে এবং তা আলোচনার মাধ্যমে প্রশ্নের আলোকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

• উদ্দীপক ও উদ্দীপক সংশ্লিষ্ট বিষয়টি শিক্ষার্থী প্রশ্নের আলোকে যাচাই করে সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করতে হবে।

• এই জাতীয় প্রশ্ন উত্থাপিত জটিল হলেও শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ট পার্থ বিষয়টি ভালোভাবে আয়ত্ব করতে পারে তাহলে নিজের ভাষায় সিদ্ধান্ত ও বক্তব্য প্রদান করতে পারবে তবে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

Related Posts