দেশ উন্নয়নে নারী সমাজের ভূমিকা

উন্নয়নে নারী সমাজে সময়ের ব্যবধানে রান্নাঘরের শিকলবন্ধী জীবন থেকে নারীর পদচারণা আজ রাজপথে। বর্তমানে নারীরা শুধু ঘরের চার দেয়ালে বন্দী থাকতে আগ্রহী নন। পরিবর্তনের সাথে সাথে নারীরা নারীর অবস্থান ও মানসিকতা ও পরিবর্তন হয়েছে। দেখা যায় যে গত 20 বছরে নারীরা পেশা গ্রহণের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে নারীরা দেশ গঠন ও সমাজসেবায় যে ভূমিকা রেখেছেন তা আজ সমগ্র জাতির সম্মান প্রদর্শন করে। প্রীতিলতা, কল্পনা দত্ত, লীলা নাগ, আশা লতা সেন, মনোরম বসু, বেগম রোকেয়া, বেগম শামসুন্নাহার মাহমুদ জিয়া কামাল প্রমুখ মহীয়সী নারীরা বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে পুরুষের সহযাত্রীর যেমন ছিলেন, তেমনি আবার নারী স্বাধীনতা ও নারীর অধিকার প্রসঙ্গে ব্যাপক গণসচেতনতা ও সংগ্রামের দুর্গ গড়ে তুলেছেন। দেশ ও জাতি গঠনে তাদের যে অবদান তারই ফল এখন আমরা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখতে পাই।

আমাদের বাংলাদেশের নারী সমাজ আজ জামা-কাপড় সেলাই, সূচি কাজ, বাঁশ ও বেতের নানা ধরনের সামগ্রী তৈরি করে পরিবারের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করছে। একদিকে যেমন ব্যাপক হারলেন নারী কর্মজীবনের জড়িয়ে পড়ছে অন্যদিকে তেমনি সব ধরনের পেশায় নারীরা রাখছে তার সফলতার স্বাক্ষর। বিমানের পাইলট থেকে শুরু করে লেখিকা,ডাক্তার,মডেলিং, ইঞ্জিনিয়ার, জজ, ম্যাজিস্ট্রেট, উকিল, দারোগা, পুলিশ, আর্মি, শিক্ষক, চলচ্চিত্র নির্মাণ, সাংবাদিক ব্যবসায়ী,প্রশাসক ইত্যাদি এমন কোন পেশা নাই যেখানে নারীরা তাদের মর্যাদাপূর্ণ উপস্থিতিতে ঘোষণা করে নাই। আমাদের বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দুজন নারী তারা দুজনই জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ১৯৯১ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করছে। কাজেই এখানে বলা যায় যে হাত দোলনা দোলায় সে হাত বিশ্ব শাসন করে। তাই নারীকে আজ আর অমর্যাদা দৃষ্টিতে এবং ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই।

মূলত নারী এবং পুরুষের মাঝে প্রকৃতিপ্রদত্ত পার্থক্য স্বাভাবিক। আজ নারীরা আত্মবিশ্বাস ও কার্যক্রম সত্যতা পেয়েছে। আজকে এ সফলতা নারীর দীর্ঘ আত্মবিশ্বাস ও সংগ্রামের ফলে নারীদের কষাঘাতে ও নারীরা পিছিয়ে নেই বরং দারিদ্র কে পেছনে ফেলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পৌঁছেছেন এবং এমন নারীর সংখ্যাও কম নয় উদাহরণ হিসাবে নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার চড়খালি গ্রামের কুলসুম বেগম, নেত্রকোনা দুর্গাপুর উপজেলার গ্রামের আয়েশা বেগম এবং রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার পাড়া গ্রামে স্বামী পরিত্যাক্তা আরজিনা খাতুন। সহায়-সম্বলহীন এই সকল নারীরা সামান্য পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করে আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশ ও সমাজ গঠনের নারীদের অবদান আজ আর লোকচক্ষুর অন্তরালে নেই বর্তমানে আজ সবদিকে ঘোষিত হচ্ছে নারী জাগরণের জয় গান।

➡বিশ্ব প্রেক্ষাপট

সমাজ গতিশীল। তাইতো সমাজ এগিয়ে চলছে। আর এ সময় মানবসম্পদ হিসেবে নারীকে কাজে লাগাতে হবে। তাহলে নারীর সত্যিকারের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। নারীদের উন্নয়ন ও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করার প্রয়োজনীয়তা পৃথিবীর সব দেশেই স্বীকৃত। তাই বিষয়টি শুধু জাতীয় পর্যায়ে বিবেচনা করলেই চলবে না বরং সারাবিশ্বে বিবেচনায় আনতে হবে। বিশ্বব্যাপী নারী উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সর্বোতভাবে সহযোগিতা জাতিসংঘ। নারীর মর্যাদা ও অধিকার বিষয়টিকে জাতিসংঘ সত্তরের দশক থেকে বিষয় গুরুত্ব দিয়ে আসছে। ↘১৯৭৫↙সালের বিশ্ব নারী বর্ষ হিসেবে ঘোষণা এবং ১৯৭৫ সালে পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই প্রক্রিয়া।
.
নারী দশক পালনের উদ্দেশ্য ছিল নারী উন্নয়ন, পরিবারে ও সমাজে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা, কর্মক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতা ও মর্যাদা বৃদ্ধি, বিশ্বব্যাপী নারীদের শিক্ষা স্বাস্থ্যসহ সার্বিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো।
.
জাতিসংঘের সহায়তায় ১৯৭৫ সালে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম বিশ্ব নারী সম্মেলন। ১৯৮০ সালে কোপেনহেগেন হাজার ১৯৮৫ সালের নারী এবং ১৯৯৫ সালের বেইজিংয়ের যথাক্রমে দ্বিতীয় তৃতীয় ও চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
.
➡জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি:

১৯৯৭ সালের ৮ই ই মার্চ জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ঘোষণা করা হয়। এ নীতির সফল করার জন্য প্রয়োজন জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো নিম্নরূপ।

  • ১. নারীর মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার বাস্তবায়ন।
  • নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদ সমাপ্তি ও বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা
  • নারীর মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান আইন সংশোধন ও নতুন আইন প্রণয়ন করা
  • সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সাধন এবং সেই লক্ষ্যে। নতুন আইন প্রণয়ন করা
  • শিশু বিশেষ করে মেয়ে শিশুর দূরীকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিশেষ করে গুরুত্ব দেওয়া
  • নারীর প্রতি সকল ধরনের নির্যাতন বন্ধ করা।
  • সশস্ত্র সংঘর্ষ ও নারীর সহঅবস্থান।
  • শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ।
  • নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন।
  • নারীর প্রশাসনিক ক্ষমতায়ন।
  • স্বাস্থ্য ও পুষ্টি
  • নারীর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা
  • নারী ও গণমাধ্যমের সংযোগ
  • দুর্দশাগ্রস্ত নারীদের সমস্যা গুলো তাড়াতাড়ি সমাধান করার চেষ্টা করা

Related Posts

41 Comments

মন্তব্য করুন