নদ নদী ও বাংলাদেশ

নদ-নদী ও বাংলাদেশ

কথ্য নদ-নদী বাংলাদেশকে জালের মতো জড়িয়ে রেখেছে। নদীর কলতান ও লাে”
লতান ও সৌন্দর্য বাংলাদেশকে চিত্ররূপময় অবয়ব দান করেছে। এসব নদ-নদী সব নদ-নদীর অপার সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করে। নদীকে কেন্দ তবেই গড়ে উঠেছে আবহমানকালের বাঙালি সংস্কৃতি। বাংলাদেশের
নদ-নদীর সৃষ্টি ও বিস্তার নিয়ে আছে কিংবদন্তি ধর্মীয় প্রাণ, লােকগাথা ইত্যাদি। বাংলাদেশের বড় নদ-নদীগুলাের তর্জন-গর্জন প্রমত্ততা নিয়েও
আছে নানা ইতিহাস। নদীকে উপজীব্য করে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে। রচিত হয়েছে অসংখ্য উপন্যাস, নাটক, কবিতা, গান ও | লােকসংস্কৃতির বিভিন্ন ধারা। তাই নদী বাঙালি জাতির স্বকীয়তার বাহক। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু ক্রমাগত
| দখল ও দূষণে বাংলাদেশের অনেক নদী আজ মৃতপ্রায়। শিল্প। কারখানার বর্জ্য, বিষাক্ত কেমিক্যাল, ক্ষতিকর প্লাস্টিক,| পলিথিন, জৈব, অজৈব ও
| গৃহস্থালি বর্জ্য নিক্ষেপ করে
নদীকে দূষিত করা হচ্ছে। ফলে
নদীগুলাে এখন রুদ্রমূর্তি ধারণ
করেছে। এসব নদীর তীরবর্তী ।
অঞ্চল এখন চাষাবাদের অনুপযােগী হয়ে পড়েছে। এছাড়াও এতদঞ্চলে।
ছড়িয়ে পড়েছে নানা রকম রােগব্যাধি । প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা নদী
দখল এখন বাংলাদেশে এক ধরনের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। আইন
ও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নদী দখল করে যাচ্ছে নদী খেকো
দুর্বত্তরা। বর্তমানে বাংলাদেশে নদ-নদীগুলাের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার
হুমকির সম্মুখীন। বলা হয় যে, সে শহর সবচেয়ে সৌভাগ্যবান যে
শহরের পাশ কিংবা মধ্য দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়। আমাদের ঢাকা
শহরের পাশ দিয়ে একটি নয়, দুটি নয়, চার চারটি নদী প্রবাহমান।
ঢাকার চারপাশের চারটি নদীর যথাযথ এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে
পারলে ঢাকা বহু পূর্বেই সিঙ্গাপুরের চেয়েও সুন্দর ও নান্দনিক নগরীতে
পরিণত হত। দুর্ভাগ্য এই যে, আমরা আমাদের সৌভাগ্যকে দুর্ভাগ্যে
পরিণত করেছি ক্রমাগতভাবে নদী দখল এবং দূষণের মাধ্যমে।
| নদীসমূহ বাঁচা-মরার ওপর বাংলাদেশের অস্তিত্ব জড়িত। নদী
আমাদের বেঁচে থাকার ভরসা। আমাদের প্রকৃতি সুরক্ষা ও নান্দনিকতার।
জন্য বড় নিয়ামক। নদ-নদী দূষণ ও দখল হলে তা বিলীন হয়ে যাবে।
আর নদ-নদী বিলীন হয়ে গেলে থাকবে না পানি। পানি না থাকলে
থাকবে না মৎস্য সম্পদ, হবে না কৃষিকাজ এবং মানুষের পক্ষেও বেঁচে
থাকা সম্ভব হবে না। সহজ ভাষায় পানি না থাকলে থাকবে না জীবন।
অর্থাৎ ব্যক্তি তার বেঁচে থাকার সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার
হারাবে। তাই নদী রক্ষার দায়িত্ব যেমন রয়েছে রাষ্ট্রের, তেমনি সচেতন
হতে হবে জনগণকে। নদী রক্ষার দায়িত্ব কেবল কোনাে বিশেষ সংস্থা বা
গােষ্ঠীর নয়, এটা টিকে থাকার জাতীয় আন্দোলন। এ আন্দোলনে আমাদের
| সবাইকে আন্তরিকতা নিয়ে শরীক হতে হবে। আর স্লোগান তুলি

নদী নিয়ে কিছু প্রশ্ন

বাংলাদেশে প্রবাহিত মােট নদ-নদী ৩১০টি। সূত্র :
| বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বাের্ড ও বাংলাদেশ পকেট
পরিসংখ্যান বই ২০১৮ |
বাংলাদেশে প্রবাহিত নদ-নদীর দৈর্ঘ্য ২৪,১৪০ কিমি
(প্রায়)। সূত্র : বাংলাপিডিয়া]
| বাংলাদেশে প্রবাহিত আন্তঃসীমান্ত বা অভিন্ন নদী রয়েছে।
৫৭টি। (সূত্র : যৌথ নদী কমিশন; ৫৮টি (বাংলাপিডিয়া] |
| বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রবাহিত আন্তঃসীমান্ত নদী
৫৪টি। (সূত্র : যৌথ নদী কমিশন; ৫৫টি (বাংলাপিডিয়া
| বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রবাহিত
আন্তঃসীমান্ত নদী ৩টি—সাংগু, মাতামুহুরী ও নাফ।
সূত্র : যৌথ নদী কমিশন ও বাংলাপিডিয়া]
ভুটান-ভারত-বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত
আন্তঃসীমান্ত নদী দুধকুমার।
চীন-ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত নদী ব্রহ্মপুত্র। ।
নেপাল-ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত নদী গঙ্গা।
বাংলাদেশের দীর্ঘতম-প্রশস্ততম-গভীরতম নদী
মেঘনা; দৈর্ঘ্য ৩৩০ কিমি, প্রশস্ত ১৩,০০০ মিটার ও
গভীরতা ২৭ মিটার। সূত্র : নতুন বিশ্ব]
| বাংলাদেশে ক্ষুদ্রতম নদী গােবা; দৈর্ঘ্য ৪ কিমি।
সূত্র : নতুন বিশ্ব
পানি সম্পর্কিত বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ
সংরক্ষণের জন্য গঠিত হয় যৌথ নদী কমিশন।
বাংলাদেশ (JRC); গঠন ১৯ মার্চ ১৯৭২।
| জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন গঠন : ৩ আগস্ট ২০১৪;
কার্যক্রম শুরু : ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪; কার্যালয় : ঢাকা ।
। নদী রক্ষায় অবদানের জন প্রবর্তিত হয় বঙ্গবন্ধু নদী

Related Posts