ছোটবেলা থেকেই আমরা বিটিভিতে বিভিন্ন ধরনের সিনেমা দেখে বড় হয়েছি। তখন আকাশ, টাটা এসবের খুব একটা প্রচলন ছিল না। শুক্রবার, শনিবার হলেই বসে পড়তাম দুপুরের পর টেলিভিশনের সামনে। তখন ছবির মধ্যে ফাইটিং সিন গুলো বেশি পছন্দ করতাম। একেকটা মাইর সেই ছিল তখনকার সময়ে। আর ভাবতাম গানের সময় একটার পর একটা ড্রেস কিভাবে পরিবর্তন করে। তখন অনেক কিছুই মনে করতাম। এটাও মনে করতাম যে হয়তো একটা ড্রেসের উপর আরেকটা ড্রেস পরে থাকে। এভাবেই চলতে থাকে ছোটবেলার সিনেমা জগত।
কমেডি সিনেমা, ফাইটিং সিনেমা, প্রেম – ভালোবাসার সিনেমা তখন পছন্দ করলেও এমন কিছু চলচিত্র দেখতাম যা টেলিভিশনের পর্দা থেকে চোখ না ফেরাতে বাধ্য করতো। যে সিনেমা গুলো মনের মধ্যে অন্য রকম অনুভূতি তৈরি করেছিল। যে সিনেমা গুলো নতুন কিছু ভাবতে শিখিয়েছিল। সেরকম কয়েকটি সিনেমা নিয়ে আলোচনা না করলেই নয়।
১.ভাত দে
ভাত দে সিনেমাটি ১৯৮৪ সালে মুক্তি পায়। নাম দেখেই বুঝতে পারছেন সিনেমাটি কোন ধরনের সিনেমা। আমরা বাংলাদেশের মানুষ দারিদ্র্যতাকে সামনে রেখেই বড় হয়েছি। কেউ অনুভব করে, আবার কেউ নিজের মধ্যে ধারণ করে। দেশের প্রত্যেকটা মানুষই জানেন ভাত, রুটি জোগাড় করা কতটা কঠিন, কতটা সংগ্রামী। এই ভাতের ক্ষিদে মিঠানো, ভাত জোগাড় করা নিয়েই তৈরি হয়েছে এই সিনেমা। দেখা না থাকলে দেখে নিতে পারেন চমৎকার এই সিনেমাটি। আপনাকে হতাশ করবে না বলতে পারি। আপনি ডুবে যাবেন দারিদ্র্যের মায়াজালে।
২.মনপুরা
চঞ্চল চৌধুরী অভিনিত মনপুরা ছবিটি মুক্তি পায় ২০০৯ সালে। খুনির দায়ে চঞ্চল চৌধুরীকে পাঠানো হয় মনপুরা নামে চর এলাকায়। সেখানে কাকপক্ষীর নিশানাও ছিল না। একা একাই নিজে নিজে কথা বলতেন। হঠাৎ একদিন দেখা দিল মাছ ধরার নৌকা এবং সেখান থেকেই জেলের মেয়ের সাথে তার ভাব হয়। তখনই শুরু হয় চমৎকার চমৎকার সংলাপ এবং তাদের সেরা অভিনয়।
৩.আয়নাবাজি
অনেক অনেক সিনেমা বিশেষজ্ঞ এই সিনেমাকে থ্রিলার, ক্রাইম থ্রিলার, কমেডি সিনেমা বলে অভিহিত করেছেন। ক্রাইম হোক, ক্রাইন থ্রিলার হোক বা কমেডি এই সিনেমাতে কিন্তু সাসপেন্স ছড়িয়ে রয়েছে। চঞ্চল চৌধুরীর আরেকটি চমৎকার সিনেমা আয়নাবাজি। যা ২০১৬ সালে মুক্তি পেয়েছে। এখানে সে টাকার বিনিময়ে একেক জন আসামির হয়ে জেল খাটেন এবং পরে ছাড়া পান। সাসপেন্স লাভার হলে দেখতে বসে যান এখনই।
৪.গেরিলা
গেরিলা সিনেমাটি দেখার পর ছোটবেলায় খেলার মধ্যে গেরিলা সাজতেই হবে এমন নিয়ম ছিল। সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০১১ সালে। মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সিনেমা তা নাম দেখেই বুঝা যাচ্ছে। গেরিলা নামে কয়েকজন সরকারের গোপনে বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানিদের হেনস্তা করে৷ জয়া আহসানের অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। কি খাঁটি অভিনয় করেছেন তিনি যা না দেখলে বুঝবেন না।
৫.দারুচিনি দ্বীপ
ছেলেবেলায় দারুচিনি বলতে মসলাকেই চিনতাম। এই নামে যে কোনো দ্বীপ থাকতে পারে তা সিনেমাটি দেখেই জানলাম। সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে ২০০৭ সালে। কয়েকজন বন্ধুবান্ধব মিলে ঠিক করলো দারুচিনি দ্বীপ যাবে। এই নিয়ে কত কল্পনা জল্পনা শুরু করে দিল। গান লিখে সুর দিয়ে ফেলল। কিন্তু বিপত্তি ঘটল যাওয়া নিয়ে। কারও চোখে সমস্যা, যেতে দিবে না। কারও কারও টাকার সমস্যা। এই নিয়ে দিন চলতে লাগল এবং অনেক বাধাবিঘ্ন পার হয়েই সবাই একসময় দারুচিনি দ্বীপ যাওয়ার উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা শুরু করে নাটকীয় উপায়ে।
উপরের সিনেমাগুলো যে সেরা ৫ এর তালিকায় রয়েছে তা বললে ভুল হবে। কিন্তু দোষের কিছুই হবে না। এই সিনেমা গুলো একেকটা মাস্টারপিস। মন খারাপ করাবে, হাসাবে,কাঁদাবে, আনন্দ দিবে, জীবনের অর্থ শিখাবে। সব গুলো সিনেমাই মনে ফোঁড়ন কাটাবে। আপনি স্ক্রিন থেকে চোখ সরাতে পারবেন না।
এখান থেকে কোনো সিনেমা দেখে থাকলে কমেন্ট করুন এবং আপনার কেমন লেগেছে তা জানাতে ভুলবেন না। আর হ্যাঁ, আপনার দেখা সেরা পাঁচটি সিনেমা সম্পর্কেও বলতে পারেন।