ভুল সিদ্ধান্তে জীবনের পরিণতি

পড়ন্ত বিকেলে রাস্তার মোড়ের চায়ের দোকানে, এটা ঠিক বিকেল নয় হবে হবে ভাব। চায়ের অর্ডার দিব ঠিক এমন চেনা মনে হয় কিন্তু যার কথা ভাবছি তার সংগে ঠিক মিলাতে পারছি না। একবার ভাবছি পরিচয় জানি আবার ভাবছি থাক না পাছে কিছু ভাবে। কিন্তু নিজের কৌতুহলকে দমাতে পারলাম না- শেষ পর্যন্ত এগিয়ে গেলাম তার দিকে বললাম আপনাকে কেন যেন চেনা চেনা মনে হয়। ভদ্রলোকের কথা শুনে হকচকিয়ে গেলাম সে বলে উঠল আমাকে না চেনা তো কিছু নেই রুবেল ।

তাছাড়া ক্লাসে ভালো ছাত্র হিসেবে সুনাম ও কম ছিল না। ছোটখাটো দুর্নামের কথা নয় বাদই দিলাম কিন্তু বিথির কমপ্লেইনের কথা আজও মনে পড়ে যখনই তোমাকে দেখি তখন। এবার তাকে চিনতে পারলাম হ্যাঁ ঠিক ধরেছি মামুন ই বটে বললাম তুই তো মামুন তাইনা তা তোর এই অবস্থা কেন 25 বছরে তুই তো পুরোটাই বদলে ফেলেছি নিজেকে আমাকে অবাক করে দিয়ে সে চায়ের দোকানে একটা খুব কড়া লিকারের লালচাঁ দিতে বলবো নিজের জন্য চায়ের কাপ হাতে নিয়ে মামুন আবারও বলতে শুরু করলো নিজেকে বদলাতে পারলাম কই রাস্তার শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে এখনো খুঁজে পাইনি আমি ওর হেয়ালিপনা দেখে বিস্মিত হলাম 25 বছর পর দেখা কিন্তু একবারও আমার কথা আমার পরিবারের কথা জিজ্ঞাস করল না চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে নিজের মধ্য থেকে কি যেন লুকোতে চেষ্টা করছে তারপর পকেট থেকে এক টাকার একটি নোট বের করে চায়ের দোকানে দিয়ে রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করল আমার দিকে ঘুরে তাকালো না আমি অবাক হলাম তারপর পিছু পিছু হাঁটা শুরু করলাম ওকে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে এইভেবে।

মামুন হাঁটছে আমি ওর পিছু পিছু হাঁটছি কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে সে একবারও ফিরে তাকাচ্ছে না প্রায় পাঁচ মিনিট হাঁটার পরে সে বেঞ্চিতে বসলো গ্রামের দিকে একটা সুবিধা কেউ কি আপনাকে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করছে কেউবা অতি উৎসাহিত হয়ে আপনাকে চা খাওয়ার অফার করছে আবার এখানে সেখানে রাস্তার পাশে কাঠের ব্রিজ তৈরি করে রাখা আছে আমি গ্রামে থাকি না কোরবানির ঈদে গ্রামের বাড়িতে এসেছি পরিবারকে নিয়ে একদিন থাকবো তার পরে আবার চলে যাব নিজের কর্মস্থলে হ্যাঁ বলতে পারেন অনেকটা অনিচ্ছা সত্যে গ্রামে এসেছে কিন্তু এখানে যে আমার জন্য এত বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে আগে বুঝতে পারিনি।

ভালো কথা মামুন সম্পর্কে বলা দরকার মামুন ছিল আমাদের ক্লাসে ভাল ছাত্রের ভিতর প্রথম শুধু পড়াশোনা নয় চলন বলন সবাইকে আকৃষ্ট করত আমরা মাঝে মাঝে ওকে নিয়ে ঈর্ষা করতাম ঠিকই কিন্তু বন্ধুত্বের সারিতে আমরা ছিলাম সবচেয়ে কাছের যখন আমরা মোবাইল ফোন ব্যবহারের কথা ভাবতেই পারিনি তখনো ও অনায়াসে মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে ঘুরছে যখন আমরা চামড়া জড়িত সন্তুষ্ট থাকতাম তখন সে চেনা সুরে ঘুরেছে যখন আমরা বাবা-মাকে পাওয়ার আলা চশমা কিনে দিতে বলতাম না পেয়ে রাগ হয়ে কত রাত যে বন্ধুর বাড়িতে কাটিয়েছি তখন সে অনায়াসে চেন ওয়ালা সানগ্লাস পরতে তাইতো আজকের সঙ্গে আগের সেই মামুনকে মিলাতে পারছি না শেষ যখন ওকে দেখেছি তপন অফিস ভালোই ছিল একটা চাকরি অনেকগুলো ব্যবস্থা সবমিলিয়ে আর্থিক অনটন তো দূরে থাক বলা যায় আমাদের মধ্যে সে অর্থোপার্জনে প্রথম ছিল সময় চোখে পড়ল বাইরের বেঞ্চে বসা খুব সাদামাটা পোশাকের এক মানুষের দিকে । ভদ্রলোককে চেনা (চলবে)

Related Posts

10 Comments

মন্তব্য করুন