ভূগোল ও পরিবেশ এ্যাসাইনমেন্ট নং-১ এর প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর (এসএসসি ব্যাচ-২০২১)

আসসালামু আলাইকুম,

আশা করি সবাই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন।
সেই কামনায় করি।

অন্যান্য শ্রেণির মতো ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করার জন্য এ্যাসাইনমেন্ট প্রকাশ করা হয়েছে।

আজকে আমি ভূগোল ও পরিবেশ-১ এর এ্যাসাইনমেন্ট প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর লিখে দিব।

নমুনা উত্তরটি হুবুহু না লিখে ধারণা নিয়ে লেখার অনুরোধ রইল।

এ্যাসাইনমেন্ট-

ভূগোল ও পরিবেশ এর মধ্যকার সম্পর্ক বিষয়ক প্রতিবেদন প্রণয়ন।

ভূগােলের ধারণা- (Concept of geography)
আমরা পৃথিবীতে বাস করি। পৃথিবী আমাদের আবাসভূমি। মানুষের আবাসভূমি হিসেবে পৃথিবীর বর্ণনা হলাে
ভূগােল। ইংরেজি ‘Geography’ শব্দটি থেকে ভূগােল শব্দ এসেছে। প্রাচীন গ্রিসের ভূগােলবিদ
ইরাটসথেনিস প্রথম ‘Geography’ শব্দ ব্যবহার করেন। ‘Geo’ ও ‘graphy’ শব্দ দুটি মিলে হয়েছে
“Geography’। ‘Geo’ শব্দের অর্থ ‘ভূ’ বা পৃথিবী এবং ‘graphy’ শব্দের অর্থ বর্ণনা। সুতরাং
‘Geography’ শব্দটির অর্থ পৃথিবীর বর্ণনা। পৃথিবী আবার মানুষের আবাসভূমি। অধ্যাপক ম্যাকনি
(Professor E. A. Macnee) মানুষের আবাসভূমি হিসেবে পৃথিবীর আলােচনা বা বর্ণনাকে বলেছেন ভূগােল।
তার মতে ভৌত ও সামাজিক পরিবেশে মানুষের কর্মকাণ্ড ও জীবনধারা নিয়ে যে বিষয় আলােচনা করে তাই
ভূগােল। কোনাে কোনাে ভূগােলবিদ অধ্যাপক কার্ল রিটার (Professor carl Ritter) ভূগােলকে বলেছেন পৃথিবীর বিজ্ঞান।

ভূগােল একদিকে প্রকৃতির বিজ্ঞান আবার অন্যদিকে পরিবেশ ও সমাজের বিজ্ঞান। প্রকৃতি, পরিবেশ ও সমাজ
সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান হলাে ভূগােলের আলােচ্য বিষয়। রিচার্ড হার্টশােন (Richard Hartshorme)
বলেন, পৃথিবীপৃষ্ঠের পরিবর্তনশীল বৈশিষ্ট্যের যথাযথ যুক্তিসংগত ও সুবিন্যস্ত বিবরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়
হলো ভূগােল।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির বিজ্ঞান একাডেমি ১৯৬৫ সালে ভূগােলের একটি সংজ্ঞা দিয়েছে। এর মতে,
পৃথিবীপৃষ্ঠে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপব্যবস্থাগুলো কীভাবে সংগঠিত এবং এসব প্রাকৃতিক বিষয় বা অবয়বের
সঙ্গে মানুষ নিজেকে কীভাবে বিন্যস্ত করে তার ব্যাখ্যা খোঁজে ভূগােল।
আলেকজান্ডার ফন হামবােল্টের (Alexander Von Humbolt) মতে, ভূগােল হলাে প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত
বিজ্ঞান, প্রকৃতিতে যা কিছু আছে তার বর্ণনা ও আলােচনা এর অন্তর্ভুক্ত।

পরিবেশের ধারণা- (Concept of environment)
মানুষ যেখানেই বাস করুক তাকে ঘিরে একটি পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিরাজমান। প্রকৃতির সকল দান মিলেমিশে
তৈরি হয় পরিবেশ। নদী, নালা, সাগর, মহাসাগর, পাহাড়, পর্বত, বন, জাল, ঘর, বাড়ি, রাস্তাঘাট, উদ্ভিদ,
প্রাণী, পানি, মাটি ও বায়ু নিয়ে গড়ে ওঠে পরিবেশ। কোনাে জীবের চারপাশের সকল জীব ও জড় উপাদানের
সর্বসমেত প্রভাব ও সংঘটিত ঘটনা হলাে ঐ জীবের পরিবেশ। পরিবেশ বিজ্ঞানী আর্মসের (Arms) মতে,
জীবসম্প্রদায়ের পারিপার্শ্বিক জৈব ও প্রাকৃতিক অবস্থাকে পরিবেশ বলে।
পার্ক (c. c. Park) বলেছেন, পরিবেশ বলতে স্থান ও কালের কোনাে নির্দিষ্ট বিন্দুতে মানুষকে ঘিরে
থাকা সকল অবস্থার যােগফল বােঝায়। স্থান ও কালের পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবেশও পরিবর্তিত হয়। যেমনশুরুতে মাটি, পানি, বায়ু, উদ্ভিদ, প্রাণী নিয়ে ছিল মানুষের পরিবেশ। পরবর্তীতে এর সঙ্গে যােগ হয়েছে
মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কার্যাবলি। ফলে সৃষ্টি হয়েছে এক নতুন ধরনের
পরিবেশ।

ভূগোলের পরিধি-
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ, নতুন নতুন আবিষ্কার-উদ্ভাবন, চিন্তাভাবনার বিকাশ, মূল্যবোধের পরিবর্তন, ভূগোলের পরিধি কে অনেক বিস্তৃত করেছে। এইসব নানান রকম বিষয় যেমন -ভূমি বিদ্যা আবহাওয়াবিদ্যা, সমুদ্রবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা, সমাজবিদ্যা, অর্থনীতি, রাজনীতি ইত্যাদি ভূগোলের বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

(ক) প্রাকৃতিক ভূগােল (Physical geography) : ভূগােলের যে শাখায় ভৌত পরিবেশ ও এর
কার্যরত বিভিন্ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত থাকে তাকে প্রাকৃতিক ভূগোল বলে। পৃথিবীর ভূমিরূপ, এর গঠন
প্রক্রিয়া, বায়ুমণ্ডল, বারিমণ্ডল, জলবায়ু ইত্যাদি প্রাকৃতিক ভূগােলের আলােচ্য বিষয়।
১। ভূমিরূপবিদ্যা (Geomorphology) : ভূমিরূপবিদগণ একটি গ্রহের নগ্নীভবন এবং ক্ষয়ীভবনের
ভূমিরূপের পরিবর্তন সম্পর্কে আলােচনা করে।
২। জলবায়ুবিদ্যা (Climatology); জলবায়ুবিদ্যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়ার ধরন
এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে পৃথিবীর প্রভাব সম্পর্কে আলােচনা করে।
৩। জীবভূগোল (Biogeography) : পৃথিবীপৃষ্ঠের প্রাণিজগৎ এবং উদ্ভিদের বণ্টন নিয়ে জীবভূগােল
আলােচনা করে।
৪। মৃত্তিকা ভূগােল (Soil geography) : মৃত্তিকা ভূগােলবিদগণ অশুমণ্ডলের উপরিভাগের মৃত্তিকা
এবং এর বণ্টন ও বিন্যাস সম্পর্কে আলােচনা করে।

৩। আঞ্চলিক ভূগােল (Regional geography) : অঞ্চলভেদে পৃথিবীর ভূপ্রকৃতি, জলবায়
জীবজন্তু, মানুষ ও মানুষের জীবনধারণ প্রণালি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ভৌগােলিক বিষয়বস্তু অনুশীলন করা আঞ্চলিক ভূগােলের প্রধান বিষয়।
৪। রাজনৈতিক ভূগোল (Political geography) : রাজনৈতিক বিবর্তন, রাজনৈতিক বিভাগ ও
পরিসীমা এবং বিভাগের মধ্যস্থিত ভৌগােলিক বিষয় রাজনৈতিক ভূগােলের প্রধান বিষয়।
৫। সংখ্যাতাত্ত্বিক ভূগােল (Quantitative geography) : ভূগােলের এই শাখায় সংখ্যাতাত্ত্বিক
কৌশল এবং মডেল ব্যবহার করে প্রমাণাৰ্থ পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া সংখ্যাতাত্ত্বিক পদ্ধতি ভূগােলের
অন্যান্য শাখায় ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কিছু ভূগােলবিদ শুধু সংখ্যাতাত্ত্বিক পদ্ধতিতে বিশেষজ্ঞ হন ।
৬। পরিবহন ভূগােল (Transport geography) : পরিবহন ভূগােলবিদরা সরকারি, বেসরকারি,
যাতায়াত ব্যবস্থা এবং মানুষ ও পণ্যের একস্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তর সম্পর্কে আলােচনা করে।
৭। নগর ভূগােল (Urban geography) : ভূগােলের এ শাখায় নগরের উৎপত্তি ও বিকাশ, নগর
ও শহরের শ্রেণিবিভাগ, নগর পরিবেশ, নগরের কেন্দ্রীয় এলাকা, নগরীর বস্তি ইত্যাদি বিষয় চর্চা করা হয় ।

পরিবেশের উপাদান (Elements of environment): পরিবেশের উপাদান দুই প্রকার যেমন জড় উপাদান।
ও জীব উপাদান। যাদের জীবন আছে, যারা খাবার খায়, যাদের বৃদ্ধি আছে, জনু আছে, মৃত্যু আছে
তাদের বলে জীব। গাছপালা, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী হলাে জীব। এরা পরিবেশের জীব
উপাদান। জীবদের নিয়ে গড়া পরিবেশ হলাে জীব পরিবেশ। মাটি, পানি, বায়ু, পাহাড়, পর্বত, নদী, সাগর,
আলো, উষ্ণতা, আর্দ্রতা হলাে পরিবেশের জড় উপাদান। এই জড় উপাদান নিয়ে গড়া পরিবেশ হলাে জড় পরিবেশ।
পরিবেশের প্রকারভেদ (Types of environment) : পরিবেশ দূই প্রকার। ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশ ও
সামাজিক পরিবেশ। প্রকৃতির জড় ও জীব উপাদান নিয়ে যে পরিবেশ তাকে ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশ
বলে। এই পরিবেশে থাকে মাটি, পানি, বায়ু, পাহাড়, পর্বত, নদী, সাগর, আলাে, গাছপালা, পশুপাখি,
কীটপতঙ্গ, মানুষ ও অন্যান্য ক্ষুদ্র প্রাণী। মানুষের তৈরি পরিবেশ হলাে সামাজিক পরিবেশ। মানুষের আচারআচরণ, উৎসব-অনুষ্ঠান, রীতি-নীতি, শিক্ষা, মূল্যবােধ, অর্থনীতি, রাজনীতি ইত্যাদি নিয়ে যে পরিবেশ গড়ে
ওঠে তা হলাে সামাজিক পরিবেশ।

ভূগােল ও পরিবেশের উপাদান সমূহের আন্তঃসম্পর্ক বিশ্লেষণঃ
ভূগােল ও পরিবেশ একে অন্যের সাথে ওতপ্রােতভাবে জড়িত। এঁদের একটি ছাড়া আরেকটি কল্পনা করা
প্রায় অসম্ভব। ভূগােল হল পৃথিবীর বিজ্ঞান পৃথিবীপৃষ্ঠে সংঘটিত ব্যবস্থাগুলাে কিভাবে কাজ করছে এবং
প্রাকৃতিক বিষয় গুলাের সাথে মানুষের কি সম্পর্ক মানুষ কিভাবে তা নিজেদের সাথে মানিয়ে চলছে তার
ব্যাখ্যা অন্বেষণেই বের হয়েছে ভূগােল অন্যদিকে মানুষ যেখানে বসবাস করুক না কেন তাকে ঘিরে রয়েছে
পারিপার্শ্বিক অবস্থা আমাদের পরিবেশ পরিবেশ যেসব উপাদান দিয়ে গঠিত হয় তার যথােপযুক্ত ব্যাখ্যা
এবং আলােচনা করার জন্য রয়েছে ভূগােল। সুতরাং ভূগােল ও পরিবেশ একই সূত্রে গাঁথা আর আমরা যদি
ভূগােল বর্ণনা ও গবেষণা কে কাজে লাগিয়ে একটি সুন্দর কাঠামাে তৈরি করতে পারি তাহলে আমরা একটি
সুন্দর পরিবেশের পৃথিবী তৈরি করতে পারব। ভূগােল ও পরিবেশ বিষয়টি অধ্যায়নের মাধ্যমে জানা যায়-

১/পৃথিবীর কোন স্থানে প্রকৃতি ও পরিবেশ, পাহাড় পর্বত, নদী সাগর, মালভূমি, সমভূমি ও মরুভূমির এদের গঠনের কারণ ও বৈশিষ্ট্য।

২/পৃথিবীর জন্ম লগ্ন থেকে কিভাবে জীবজগতের উদ্ভব হয়েছে সে বিষয়ে বিজ্ঞানসম্মত ধারণা অর্জন।

৩/পৃথিবীর বিভিন্ন পরিবেশের উদ্ভিদ ও প্রাণী এবং এদের আচার-আচরণ খাদ্য ও জীবনধারার বৈচিত্র।

৪/ কৃষি-শিল্প ব্যবসা-বাণিজ্য পরিবহন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে সামাজিক পরিবেশের কি পরিবর্তন হয়েছে।

৫/ প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টির কারণে ক্ষয়ক্ষতি ও নিয়ন্ত্রণ ভূ-প্রকৃতির অবস্থান ও যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব অনুযায়ী ভূমি ব্যবস্থাপনা।

৬/ পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া এর প্রভাব।

প্রতিবেদক এর নাম-
প্রতিবেদক ঠিকানা-
প্রতিবেদন এর তারিখ-

এই ছিল একটি নমুনা উত্তর।
ভুল-ত্রুটি থাকলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।

ধন্যবাদ।

Related Posts