মানুষ কীভাবে আসলো পার্ট ২

পার্ট-২

বাইবেল বিশেষজ্ঞদের মতে++

বাইবেলের বিচার-বিশ্লেষণের বেলায় বাইবেল-বিশেষজ্ঞদের প্রদত্ত তথ্য অনুসারে দেখা যাচ্ছে, বাইবেলের বক্তব্য শুধু সংশােধিত ও সেকেলে নয়; বরং তা পুরােপুরিভাবে অগ্রহণযােগ্য। এই নিরিখে বাইবেলের রচনায় মানুষের হস্তক্ষেপ যে কতটা কার্যকর ছিল, সে বিষয়ে আমরা একটা স্থির-সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি। বাস্তবেও দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব- সংক্রান্ত বাইবেলের বর্ণনা বা বক্তব্য খুবই সংক্ষিপ্ত। সম্ভবত, বহুকাল আগে এই বক্তব্য কেটেছেটে ফেলা হয়ে থাকবে। বাইবেলের জেহেভিস্ট সংস্করণের বক্তব্যের আলােকে সহজেই অনুমান করা চলে যে, খ্রিস্টপূর্ব নবম ও দশম শতাব্দীতে পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব সম্পর্কে তখনকার প্রচলিত ধারণাটা ছিল কিরূপ। কেননা, ওই সময়টাতেই বাইবেলের ওই সংস্করণটি রচিত
হয়েছিল। এরপর বাইবেলের যে সংস্করণটি সম্পর্কে আমরা সম্যক অবহিত, তা হল, সেকেৱভোটাল সংস্করণঃ খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে পুরােহিত-পাদ্রীরা এটি রচনা করেছিলেন। সে সময় জনগণের মধ্যে পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব-সম্পর্কিত যে ধারণা প্রচলিত ছিল, সে ধারণাটাই এই সংস্করণের জেনেসিস’ বা আদিপুস্তকে’ একান্ত নিষ্ঠার সাথে সন্নিবেশিত হয়েছে। পরবর্তীকালে বাইবেলের পত্নাতন নিয়মের ঐতিহ্য অনুসরণ করে খ্রিস্টানদের বাইবেলেও (নতুন নিয়মে) পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব-সম্পর্কিত সময়ের একটা হিসাব তুলে ধরা হয়। সেই থেকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ওজরে গেছে, প্রতিটি বাইবেলে পৃথিবীতে
মানুষের আবির্ভাব-সংক্রান্ত এই হিসাবটা বিশ্বস্ততার সাথে উল্লিখিত হয়ে এসেছে।
আমার যতদূর মনে পড়ে, ১৯৩০ সালে প্রকাশিত ধর্মীয় বিধি-বিধান। সংক্রান্ত একটি পুস্তকেও বাইবেলের এই হিসাব তুলে ধরে পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব সম্পর্কে সময়ের একটা হিসাব পেশ করা হয়েছিল বলে দেখেছিলাম।
তাতে বলা হয়েছিল যে, মােটামুটিভাবে খ্রিস্টপূর্ব ৪,০০০ বছর আগে পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব ঘটেছিল। এভাবে বাইবেলের এই ধরনের শিক্ষাই সেকালে আমাদের সময়কার তরুণ খ্রিস্টানদের মনমানসিকতা গড়ে তুলেছিল। খ্রিস্টান অধ্যুষিত সব দেশেই কোরআন সম্পর্কে সাধারণভাবে যতসব ভ্রান্ত ধারণা দীর্ঘকাল যাবত প্রচলিত ছিল; এবং এখনাে কোরআনের ইতিহাস ও
বক্তব্য সম্পর্কে সেই ধারণাই চালু রয়ে গেছে। এ কারণে মানুষের আদি উৎস সম্পর্কে কোরআনে যে সব তথ্য ও পরিসংখ্যান রয়েছে, তা জানার আগে কোরআন কিভাবে মানুষের কাছে সম্প্রচারিত হয়েছে, তার ইতিহাস জানা
আবশ্যক। মানুষের অরিজিন বা আদি উৎস সম্পর্কে কোরআনের যে বক্তব্য, তা সঠিকভাবে জানবার সুযােগ পেলে আধুনিক যুগের পাশ্চাত্য শিক্ষিত যে কোন মানুষ বিস্ময়ে হতবাক না হয়ে পারবেন না। পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব-
সম্পর্কিত কোরআনের এই বক্তব্য আমি যখন প্রথম আবিষ্কার করেছিলাম, আমিও তখন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে পড়েছিলাম। বস্তুত, পৃথিবীর মানুষের আবির্ভাব তথ্য মানুষের অরিজিন-সম্পর্কিত বাইবেল ও কোরআনের বক্তব্যের
তুলনামূলক পৰ্যালোচনা সবিশেষ চমকপ্রদ। উভয় ধর্মগ্রন্থেই সৃষ্টিকর্তা হিসাবে
বিধাতার কথা বলা হয়েছে। তবে, বিধাতার এই সৃষ্টিকর্ম সম্পর্কে বাইবেলে যে
বর্ণনা রয়েছে তা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। পক্ষান্তরে,
কোরআনে এ সম্পর্কে এ ধরনের কোন অবৈজ্ঞানিক বর্ণনা অনুপস্থিত।

Related Posts