বাঙালির গরম মৌসুমের একটি অতিপ্রিয় খাবার আমের আচার। আমের আচার আমরা ছোট-বড় সব বয়সের মানুষই কম-বেশি পছন্দ করে থাকি। খিঁচুড়ি, গরম ভাত-ভর্তার সাথে কিছুটা আমের আচার খাবারের স্বাদ অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। একেকজন একেক রকমভাবে আমের আচার খেতে পছন্দ করে। অনেকে খিঁচুড়ি বা ভাতের সাথে আচার খেতে পছন্দ করে, অনেকে আবার এমনিই শুধু আচার খেতে পছন্দ করে।
কিন্তু রোদে আম শুকানোর ঝামেলার জন্য আমরা অনেকেই আমের আচার বানিয়ে খেতে পারি না। আধুনিক দিনে আমরা প্রায় বেশিরভাগ মানুষ বিল্ডিং – এ বসবাস করি। গ্রামের উঠানে আম শুকানোর সুবিধাটা বিল্ডিংয়ে থেকে সহজে পাওয়া যায় না। এর জন্য আমরা আমের আচার খাওয়া থেকে বঞ্চিত হই।
তাই আজকের রেসিপিটা গ্রামে, শহরে যেখানেই থাকেন না কেন, রোদে শুকানোর ঝামেলা ছাড়া সহজেই বানাতে পারবেন। আর এই আচারটা কীভাবে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে পারবেন, সেই উপায়টাও জানতে পারবেন এখান থেকে। তাহলে শুরু করা যাক –
আচারটি বানাতে যে যে উপকরণগুলো লাগবেঃ
১. কাঁচা আম ১(এক) কেজি [যার যতগুলো ইচ্ছা আম নিতে পারে ]
২. হলুদ গুঁড়া
৩. সাদা লবণ
৪. জিরা
৫. ধনিয়া
৬. পাঁচফোড়ন
৭. মেথি
৮. শুকনো মরিচ
৯. তেজপাতা
১০. দারচিনি
১১. এলাচ
১২. সরিষার তেল
১৩. রসুন
১৪. বিট লবণ
১৫. চিনি অথবা গুঁড়
১৬. হোয়াইট ভিনেগার বা সিরকা
আচারের মশলা তৈরিঃ
১ চা চামচ জিরা, ১ চা চামচ ধনিয়া, ১ চা চামচ পাঁচফোড়ন, আধা চা চামচ মেথি, শুকনো মরিচ ৪-৫ টি এগুলো হালকা বাদামি করে ভালোভাবে ভেজে গুঁড়ো করে নিতে হবে (ব্লেন্ডারে বা পাটায় বেটে নিতে পারেন, তবে আচারের মশলাগুলো আধাবাটা করে নিতে হবে)।
রন্ধন পদ্ধতিঃ
কাঁচা আমগুলোর খোসা ছাড়িয়ে আমগুলোকে কুচি কুচি বা টুকরো টুকরো করে কেটে নিতে হবে (যেহেতু এটা আমের গলানো আচার সেহেতু, আপনারা নিজেদের সুবিধামতো করে আমগুলো কেটে নিতে পারেন)। তারপর কাটা আমগুলোকে লবণ ও হলুদ দিয়ে ভালোভাবে মেখে নিন।
একটি বড় কড়াইয়ে পরিমাণমতো সরিষার তেল নিতে হবে (সরিষার তেল আমের দ্বিগুণ পরিমাণ নিতে হবে)।
তেল গরম হলে ১০-১৫ টি রসুনের কোয়া (আস্তো বা কুচি করে কেটে) বাদামি করে ভেজে নিতে হবে। তারপর ৫-৬ টুকরা দারচিনি, ৬-৭ টা এলাচ, ৩-৪ টা তেজপাতা, ১ চা চামচ আস্তো পাঁচফোড়ন, ৩-৪ টা আস্তো শুকনো মরিচ তেলে ১০-১৫ সেকেন্ড ভেজে নিতে হবে।
তারপর হলুদ-লবণ দিয়ে মাখানো আমগুলো তেলে দিয়ে দিতে হবে। তারপর ১ চা চামচ হলুদ, পরিমাণমতো বিট লবন, স্বাদমতো চিনি বা গুঁড় দিয়ে সবকিছু ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
তারপর ৩-৪ টেবিল চামচ সিরকা দিয়ে সবকিছু আবার মিশিয়ে নিতে হবে। এখন নেড়ে নেড়ে আমগুলোকে গলিয়ে নিতে হবে। আমগুলো যখন গলে যাবে তখন তৈরি করা আচারের মশলাটা দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। আচার হওয়ার আগপর্যন্ত আমগুলোকে কিছুক্ষণ পর পর নেড়ে দিতে হবে, তা না হলে পোড়া লেগে যেতে পারে।
কখন বুঝবেন আচার হয়ে গেছেঃ
যখন আচার হয়ে যাবে তখন আচার কড়াইয়ের গায়ে লেগে যাবে না। তেল এবং আচার আলাদা হয়ে যাবে, মানে তেল উপরে ভেসে থাকবে আর আচার নিচে থাকবে। আর আচারের রঙটা হালকা বাদামি কালারের হবে। তখন বুঝা যাবে যে, আচার হয়ে গেছে।
পরেরদিন আচারটা খেলে বেশি স্বাদ লাগবে। কারণ আচার এমন একটা খাবার যেটা যতো পুরনো হয়, তত বেশি স্বাদ লাগে।
আচার সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ
যেহেতু এটা রোদে না শুকানো আচার সেহেতু, এটাকে মাঝে মাঝে চুলায় জাল দিতে হবে। তারপর ঠান্ডা করে বোয়োমে ভরে নিতে হবে। আর অবশ্যই কাঁচের বোয়োমে ভরে আচারটি সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতি ১-২ মাসে ১ বার করে আচারটা জাল দিলে অন্তত ৫-৬ মাস বা তারও বেশি সময় আচারটা ভালো থাকতে পারে। আর আচারটা যেন তেলে ডুবানো অবস্থায় থাকে (অর্থাৎ তেল আচারের দ্বিগুণ হবে)। এছাড়াও চাইলে মাঝেমধ্যে বোয়োমসহ আচারটিকে রোদে দিতে পারেন।
এই আচারটা খেতে খুবই সুস্বাদু। আপনারা এটা বানিয়ে দেখতে পারেন। রোদে না শুকাতে পারায় যারা আচার খেতে পারছেন না, তারা এই পদ্ধতি অনুসরণ করে আচারটি বানাতে এবং সংরক্ষণ করতে পারেন।
আজকের মতো এতটুকুই। আসসালামু আলাইকুম।