সফটওয়্যার পাইরেসি ও উহার প্রতিরোধের উপায়

সফটওয়্যার পাইরেসি (Software Piracy)

সফটওয়্যার পাইরেসি বলতে প্রস্ততকারী বিনা অনুমতিতে কোনো সফটওয়্যার কপি করা, বিতরণ করা, আংশিক পরিবর্তন করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়া ইত্যাদি কার্যক্রমকে বুঝায়। অন্যের জিনিস চুরি করার মতো সফটওয়্যার পাইরেসি করাও একটি অপরাধ। সফটওয়্যার পাইরেসির কারণে সফটওয়্যার প্রস্ততকারী প্রতিষ্ঠান আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পাইরেসি প্রতিরোধের উপায় :

১. পাইরেসি প্রতিরোধে সর্বপ্রথম কাজ হলো দেশের প্রচলিত আইন মেনে চলা।

২. যখন কোনো সফটওয়্যার ইন্সটল করা দরকার, ধৈর্যের সাথে টার্মস এন্ড কন্ডিশন ভালোভাবে পরতে হবে। শুধু পড়লেই হবে না, কর্মে তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। এটি কপিরাইট লঙ্ঘন করলে সেটি ব্যবহার করা হতে বিরত থাকতে হবে।

৩. পাইরেটেড সফটওয়্যার কিনে পয়সা বাচাতে হবে এমন মন মানসিকতার কারণে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না। এই মানসিকতার অবসান ঘটাতে হবে।

৪. সফটওয়্যার কেনার টাকা না থাকলে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সফটওয়্যার নির্মাতার অনুমতি নিয়ে সফটওয়্যার ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে এর ব্যবহার অবৈধ হবে না।

৫. যেহেতু এখনও অনলাইনে লাইসেন্স কেনার পর্যাপ্ত সুযোগ দেশে নেই, তাই পাইরেসি থেকে রক্ষা পাওয়ার কার্যকরী হাতিয়ার ফ্রিওয়্যার, ওপেন সোর্স সফটওয়্যার এবং সকল প্রকার ফ্রি সফটওয়্যার ব্যবহার করা। পাইরেসি থেকে বাঁচতে আমাদের পেইড সফটওয়্যার এর পরিবর্তে ওপেন সোর্স সফটওয়্যার ব্যবহার ও এতে অভ্যস্ত হতে হবে।

৬. অফিস গুলোতে বাণিজ্যিক সফটওয়্যার সমূহ কিনে ব্যবহার করার প্রবণতা সৃষ্টি করতে হবে। অফিসগুলো নিজেরাই এই কাজটি করতে পারেন।

৭. পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহারের কারণে ব্যবহারকারীর কম্পিউটার ঝুঁকির মধ্যে থাকে। কাজেই অফিসের কর্মীদের মধ্যে এর অরিজিনাল সফটওয়্যার ব্যবহারের গুরুত্বকে যথাযথ ভাবে উপস্থাপন করতে হবে।

৮. পাইরেসি প্রতিরোধে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এর কুফল, আইনের ধারা ও শাস্তির বিধান সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে।

৯. বর্তমানে ইন্টারনেট প্রযুক্তি পাইরেসির প্রধানতম মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। কাজেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে কপিরাইট লঙ্ঘনের যে সমস্ত উপায় রয়েছে সেগুলোর উপর নজরদারী বাড়ানো প্রয়োজন। প্রয়োজনে লঙ্ঘনকারী সাইট গুলোকে ব্লক বা বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে।

১০. শক্তভাবে আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে পাইরেসি প্রতিরোধ করা সম্ভব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এই ব্যাপারে অগ্রণি ভূমিকা পালন করতে হবে। সেজন্য পুলিশ ও অন্য সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন যাতে করে তারা পাইরেটেড পণ্য বিক্রেতাদের আইনের আওতায় আনতে পারে।

যারা পাইরেটেড পণ্য ক্রয় করে এবং যারা বিক্রয় করে তাদের এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। সরকারকে আরও বেশি এ সম্পর্কে দৃষ্টি দিতে হবে। পাইরেটেড সফটওয়্যার বিকিকিনির ফলে যারা কষ্ট করে সফটওয়্যার তৈরি করে, তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ব্যাপারে আমাদের অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। দেশের তরুণ সমাজ প্রয়োজনীয় অনেক সফটওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। পাইরেসির কারণে কোনোভাবেই এ অগ্রযাত্রায় বাধা পড়তে দেওয়া যাবে না।

Related Posts

26 Comments

  1. পাইরেটেড সংক্রান্ত বিষয়ে অনেক তথ্য অবগত হলাম। সুন্দর লেখা এবং যারা সফটওয়্যার ব্যবহার করেন ও করবেন তাদের জন্য লেখাটি বিশেষ উপযোগী হবে। বিশেষ করে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করা যে একটা গর্হিত কাজ তা সম্যকভাবে উপলব্ধি করলাম এবং এরফলে যে সফটওয়্যার নির্মাণকারীদের সমূহ ক্ষতি হয় তা জেনে মনে দুঃখ অনুভব করলাম। কারণ বাংলাদেশের মত একটি অনুন্নত দেশে যেখানে ৯০% মানুষ পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহারে অভ্যস্ত এবং তাদের ইনটেক সফটওয়্যার ক্রয় করে ব্যবহার করার সামর্থ্য নেই কারণ সফটওয়্যারের মূল্য অনেক হয়ে থাকে অন্যদিকে গরীব মানুষের পক্ষে এসব সফটওয়্যার কেনার সামর্থ্য থাকে না। এক্ষেত্রে উভয় পক্ষই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

মন্তব্য করুন