সেই একদিন ( তাড়াহুড়ো করার গল্প)

আজকে অফিসের প্রথম দিন ।অফিস শুরু সকাল ১০ টায়। ঘুম থেকে উঠতে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। ফজরের নামাজ পড়ে আর ঘুমানোটা উচিত হয়নি। তাড়াহুড়া করে তৈরি হয়ে অফিসের জন্য বের হলাম। ঘড়িতে তখন ৮ টা বাজে ।অফিসে পৌঁছাতে কমপক্ষে এক থেকে দেড় ঘন্টা সময় লাগবে। বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি। আমার মত অনেকেই তীব্র অপেক্ষায় বাসের জন্য।

মধ্য বয়স্ক একজন লোক আমার সামনে এসে হাত পাতল কিছু পাওয়ার আশায়। পিছনের পকেটে হাত দিলাম মানিব্যাগটা বের করতে। দেখি পুরাতন মানিব্যাগটা নিয়ে এসে পড়েছি নতুন মানি ব্যাগের পরিবর্তে ।নিশ্চয়ই বাসায় ফেলে এসেছে ।গতকাল রাতে পুরাতন মানিব্যাগটা থেকে টাকা বের করে নতুন মানিব্যাগটা রাখি ।দৌড়ে গেলাম বাসায় নতুন মানিব্যাগটি আনতে।

লিফট বন্ধ কেন? দারোয়ানকে জিজ্ঞাসা করায় বলল না কি সমস্যা হয়েছে ।এখন আট তলা আমায় সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হবে। আজ এত তাড়াতাড়ি ৮ তলা সিড়ি বেয়ে উঠলাম যা আর কোনদিন উঠেনি।

কিন্তু ফ্ল্যাটের গেট খোলার চাবি কোথাও পাচ্ছি না। তন্ন তন্ন করে প্যান্টের পকেটে, শার্টের পকেটে, ব্যাগের পকেট খুঁজলাম ।কিন্তু কোথাও নেই ।তারমানে হয়তো কোথাও চাবি ফেলে দিয়েছি অথবা ঘরে চাবি রেখে তালা দিয়ে দিয়েছি ।দ্বিতীয় টা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি । তাড়াতাড়ি দারোয়ানকে ফোন করে বললাম চাবি বানানোর মিস্ত্রীকে ডেকে আনতে। প্রথম দিনেই অফিসে যেতে দেরি হবে। আজকে জানিনা আমার সাথে আর কি কি হবে। আধা ঘন্টা হয়ে গেছে দারোয়ানের কোনো খোঁজ-খবর নেই। ফোন দিয়ে জানতে পারলাম এখনো কোন মিস্ত্রি পায়নি। তাকে এসে পরতে বললাম ।সময় এখন ৮:৪৫। তাড়াতাড়ি করে নেমে বাসার নিচের দোকানদার থেকে ১০০ টাকা ধার নিলাম রাতে ফেরত দেওয়ার কথা বলে ।টাকাটা পুরাতন মানিব্যাগে রেখে তাড়াতাড়ি হাঁটা শুরু করলাম ।

আবার সেই বাসের অপেক্ষায় । প্রতিটি সেকেন্ড এখন আমার কাছে এখন মনে হচ্ছে এক এক ঘণ্টার মত। অবশেষে বাস এল। বাসের গেইটে ঝুলে যেতে হবে আর উপায় নেই।
কিছুক্ষণ পর বাস থামল কয়েকজন যাত্রী নামবে। বাস থেকে নামলাম যাত্রীদের নামাবার জায়গা করে দিতে ।যাত্রী নামার পর যখন আবার বাসে উঠবো তখন হঠাৎ পিছনের পকেটে হাত গেল। দেখি মানিব্যাগটা নেই। এবার নিশ্চয়ই ছিনতাই।বাসে আর ওঠা হলো না। সোজা হাঁটা শুরু করলাম। ভাবছিলাম এখন যদি হেল্পার পেছন থেকে ডাক দেয় ভাড়ার জন্য তাহলে কি উত্তর দিব। তবে ভাগ্য ভালো পেছন থেকে কোন ডাকার শব্দ পেলাম না ।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ৯:২০ এর মত বাজে ।অফিস যাওয়ার আশা সম্পূর্ণ ত্যাগ করে বাসার দিকে হেঁটে হেঁটে রওনা দিলাম। কত আশা করেছিলাম প্রথম দিন অফিসে নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হবো। নতুন কাজ শুরু করব ।তার কিছুই হলো না বরং প্রথম দিন না যাওয়ার অপরাধে কালকে কি হবে তা ভেবে ভয় করছে ।সামনের দিক থেকে চাবি ঠিক করার মিস্ত্রি আসছে ।যখন দরকার ছিল তখন পেলাম না ।যাই হোক তাকে ডাক দিয়ে নিয়ে বাসায় ফিরলাম।

মিস্ত্রি নতুন চাবি বানিয়ে দিলো। তালা খুলে অবশেষে ঘরে প্রবেশ করতে পারলাম। নতুন মানি ব্যাগটা টেবিলের উপরে পড়ে আছে। তার পাশেই চাবিটাও রয়েছে। মিস্ত্রিরির মজুরি দিয়ে ভাবলাম অফিসে একটা ফোন করি ।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম অফিসের নাম্বার থেকে সকাল আটটার দিকে একটা মেসেজ এসেছে। এতক্ষণ খেয়াল করে নি। মেসেজে লেখা: “কোম্পানির মালিকের বাবা মারা যাওয়ায় আজ অফিসের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তাই আজ অফিসে না আসার অনুরোধ রইল।”

Related Posts

12 Comments

মন্তব্য করুন