হারানো পুত্র

একজন ব্যক্তি যার পুত্র ছিল; দুইজন তাহাদের মধ্যে কনিষ্ঠ পুত্র পিতাকে বললো,
বাবা সম্পত্তির যে অংশ আমার ভাগে পড়ে, আমাকে দিয়ে দেন।

এইকথা শুনে, পিতা তার দুই ছেলেকে সমস্ত সম্পদ ভাগ করে দিলে‌ন। অল্প দিন পরে সেই কনিষ্ঠ পুত্র সমস্ত সম্পদ নিয়ে দূরদেশে অবস্থান করলো, এবং সেখানে গিয়ে তার সমস্ত সম্পত্তি ব্যয় করিলো।

আর সে তার সমস্ত ব্যয় করাই,সেই দেশে বেশ ভারি আকাল পড়িল,এবং সে কষ্টে পড়িতে লাগলো।

তারপর, সে দেশের একজন গৃহস্হের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। আর তাকে সেই গৃহস্হ মাঠে শূকর চরাইতে পাঠালেন। তখন শূকরে যে গুঁটি খাইত, সেও সেই খাবার খেয়ে পেতের ক্ষুধা নিবারণ করত।

তাকে কেউ কোন খাবার দিত না। এরপর তার চেতনা জাগিলে বলতে থাকে,আমার পিতার কত মজুর বেশি বেশি খাদ্য পাইতেছে,কিন্তু আমি এখানে ক্ষুধায় মরতেছি।

এবার সেই ক্ষুধার্ত ব্যক্তি আপন মনে বললো, হে,পিতা আমি আপনার নিকটে যাইব, আর ক্ষমা চাইব কারণ আমি আপনার ও স্বর্গের বিরুদ্ধে সাক্ষাতে পাপ করেছি।

আমি আর আপনার পুত্র নামের যোগ্য নই।
আমাকে তোমার একজন কাজের মজুরের মত রাখ।

তিনি সেখান থেকে উঠিয়া চলে গেল পিতার নিকট। সে দূরে থাকিতে তার পিতা তাকে দেখতে পেল, এবং করুণাবিষ্ট হলেন ।

পিতা দৌড়িয়া তার পুত্রের নিকট গেল, এবং গলা ধরিয়া চুম্বন করতে লাগল। আর পুত্র বাবাকে বলল, আমি আপনার পুত্র হবার যোগ্য নই। আপনার বিরুদ্ধে গিয়ে পাপ করেছি। এটাই আমার পাপ্য।

কিন্তু পিতা সাথে সাথে পুত্রকে ফিরে পেয়ে সকল দাস-দাসিকে খবর দেয়, শীঘ্র করিয়া ভালো ,দামি পোশাক পড়াই দাও আমার পুত্রকে।

এবং ইহার হাতে অঙ্গুরি দেও; ও পায়ে জুতা পড়াও; আর সবচেয়ে স্বাস্হ্যবান বাছুরটিকে আনিয়া মার; আমরা ভোজন করিয়া আমোদ প্রমোদ করি; কারণ আমার এই পুত্র মরিয়া গিয়েছিল, এখন বাঁচিল; হারাইয়া গিয়াছিল, এখন পাওয়া গেল।

এই কথা শুনে সকল রাজ্যবাসী আনন্দে মেতে উঠল।আর তাহার জ্যেষ্ঠ পুত্র ক্ষেত্রে ছিল। পরে সে যখন আসিতে আসিতে মহলে পৌছাইলো শুনতে পেল, নানা বাদ্য বাজনার আওয়াজ ।আর সে একজন দাসকে ডাকিয়া জিঞ্জাসা করলেন , এসব কি হচ্ছে? সে তাহাকে বলিলো, তোমার ছোট ভাই ফিরিয়া আসিছেন।আর তার ফিরে আসার আনন্দে আপনার পিতা সাস্হ্যবান বাছুরটি মারিয়াছেন, কারণ তার পুত্র মরিয়া গিয়াছিল, বাঁচিয়া ফিরে এসেছেন। এরপর এই কথা শুনে ত্র্রুদ্ধ হইয়া উঠল, আর ভিতরে যেতে চাইল না।তখন পিতা তাকে শান্তনা দিতে লাগলেন।কিন্তু সে পিতাকে উত্তর করিয়া বলল, দেখ আমি এত বৎসর আমি তোমার নিকট তোমার সেবা করিয়া আদিতেছি।কখনও আপনার আদেশ লঙ্ঘন করি নাই।

তথাপি আমাকে একটা ছাগবৎস দেও নাই, যেন আমি আমার বন্ধুদের সাথে আমোদ প্রমোদ করতে পারি; কিন্তু তোমার এই যে পুত্র তার সমস্ত সম্পদ আমোদ প্রমোদ করিয়া
শেষ করিয়াছে।

আর সে যখন আসিল,আর তাহার জন্য এত কিছু আয়োজন করলেন।

তিনি তাহাকে কহিলেন, দেখ পুত্র তুমি সর্ব্বদাই সঙ্গে আছ, আর যা যা আমার, সকলেই তোমার।
কিন্তু আমাদের আমোদ ও প্রমোদ করা উচিৎ হইয়াছে, কারণ তোমার এই ভাই মরিয়া গিয়াছিল, এখন বাঁচিল; হারাইয়া গিয়াছিল,এখন পাওয়া গেল।

আমরা এই গল্প থেকে ছোট একটি উদাহরণ পাই যে, আমরা পিতা-মাতার কাছে যেমন সন্তান হই না, কেন তারা আমাদের খুব ভালোবাসেন।
আমাদের সকল ভূলভ্রান্তি , পাপ ক্ষমা করেন।
যেমন গল্পে পিতা তার পুত্রের সকল পাপ ক্ষমা করে কাছে টেনে নেয়।

আমাদের উচিৎ সর্বদাই , বাবা, মাকে ভালোবাসা। ও তাদের সেবা করা।

Related Posts