হোমিওপ্যাথি নিয়ে সামান্য কিছু কথা

হােমিওপ্যাথিতে কি অসুখ সারে? নিশ্চই সারে। না হলে এত মানুষ হােমিও-চিকিৎসা করান কেন! ঘরে ঘরে হােমিওপ্যাথি কেন! সরকার-প্রবর্তিত হােমিওপ্যাথি কলেজ, হাসপাতাল, গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র কেন!
আপাতভাবে যুক্তিপূর্ণ শোনালেও কথায় ফাক আছে। কোন অসুখ কতজনের সারে?
কতজনের সারে না? দুরূহ, জটিল, মারাত্মক ব্যাধি কি হােমিও চিকিৎসায় আদৌ নিরাময় হয়?সবচেয়ে বড় কথা, অসুখ সারলে কিভাবে সাৱে? কোন বৈজ্ঞানিক নিয়মে? এই প্রশ্নগুলির নির্ভেজাল প্রামাণ্য উত্তর বা ব্যাখ্যা না পেলে হােমিওপ্যাথির গ্রহণযােগ্যতা নিয়ে সন্দেহ থেকে যাবেই। কেবল অভিজ্ঞতায় নির্ভর করলে অনেক গােলমাল এসে যাবে। শুধু ‘অসুখ সারে’ বললে তাে জলপড়া তেলপড়া মাদুলি আংটি রেইকি ম্যাগনেটোথেরাপি-তেও অনেকেরই রোগ সারে কষ্ট কমে শোনা যায়। কিভাবে সারে তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় কই!সরকারের স্বীকৃতি কোনাে বিজ্ঞানসম্মত যুক্তি নয়। সরকারি নীতিতে রাজনৈতিক স্বার্থজড়িত থাকে। আধুনিক বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পরিষেবা শহরে-গঞ্জে-গ্রামে সুষ্ঠভাবে পৌঁছে দেওয়ায় ব্যর্থ সরকার। সেই ব্যর্থতাকে আড়াল করতে সরকারি উদ্যোগে হােমিওপ্যাথিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, কলেজ ও চিকিৎসাকেন্দ্র চালু করা হচ্ছে রাজ্যের নানা প্রান্তে। তাতে কি হােমিওশাস্ত্রের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি প্রমাণিত হয় ?নানা কারণেই গত দেড় দু’দশকে হােমিও চিকিৎসা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আধুনিক বৈজ্ঞানিক চিকিৎসার (অ্যালােপ্যাথি) অপ্রতুলতা, সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাওয়া খরচ, ক্রমশ ঊর্ধ্বগামী ওষুধের দাম, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির চরম’ ছন্নছাড়া দৈন্যদশা জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ এটাই। এই সবই সাধারণ জনগণকে অপেক্ষাকৃত সুলভ হােমিও-চিকিৎসার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তা বলে হােমিওপ্যাথি চিকিৎসাকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক অহমিকায় ‘বাতিল’ বলে রায় দেওয়ার কোনাে যুক্তি নেই, কারণ এ বিদ্যা নিয়ে চর্চা, সমীক্ষা, গবেষণা থেমে নেই। প্রয়ােগ, পরীক্ষা, প্রচেষ্টা চলছে দেশে-বিদেশে। যাবতীয় হােমিও-চিন্তা এখনাে অষ্টাদশ-উনবিংশ শতাব্দীর হ্যানিম্যানে থমকে দাড়িয়ে আছে এ কথা বলা ধৃষ্টতার পরিচয় হবে।কাজেই বিতর্কের সুযােগও প্রয়ােজনীয়তা থেকেই যাচ্ছে। যে-কোনাে ‘প্যাথি’ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও ভিত্তির নিরীখে ছাড়পত্র পেলে তা মানুষেরই কল্যাণ সাধন করবে। বিজ্ঞানসম্মতভাবেই তা গ্রহণযােগ্য হবে, “বৈজ্ঞানিক গোঁড়ামি”কে প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না।

Related Posts