আপনি কি জানেন আপনার ফোনে এমন কিছু ফিচার রয়েছে যা আপনার কল্পনারও বাহিরে। এমন কিছু গোপনীয় ফিচার যেগুলো সম্পর্কে আপনার কোনো ধারনাও নেই। এ ফিচারগুলোর মাধ্যমে আপনি আপনার ফোনের চেহারা পাল্টে দিতে পারেন৷ এগুলোর কয়েকটি আপনার ফোনের জন্য বেশ কার্যকর আবার কয়েকটি অকার্যকর। কতকগুলো আপনার ফোনকে রঙিন করে তুলবে। কতকগুলো পারফরম্যান্স বৃদ্ধি করবে। আপনি নিজেও জানেন না এগুলো আপনার ফোনে এতদিন বাস করছিল। কিন্তু কোথায় আছে এসব?
পূর্বেই বলেছি এগুলো গোপনীয়। নতুন ফোনগুলোতে এগুলো বাই ডিফল্ট ডিজেবল করা থাকে। তাই নিজে থেকেই তা অন করে নিতে হয়। আপনার ফোনের সেটিংসে একটি অপশন আছে যার মাধ্যমে আপনি সেসব ফিচার গুলো প্রয়োগ করতে পারেন৷ অপশনটি হলো ডেভেলপার অপশন।
ডেভেলপার অপশন কি?
ডেভেলপার অপশন হলো ডেভেলপারদের নিজস্ব সুবিধার্থে তৈরি করা কিছু ফিচার সমন্বিত সেটিং। যেটি তারা ফোনের ভেতর বিভিন্ন পরিবর্তন সাধনের জন্য এবং ফোনের পারফরম্যান্সের উপর প্রভাব ফেলার জন্য ব্যবহার করে থাকে। প্রায় প্রতিটি ফোনেই ডেভেলপার অপশন রয়েছে।
ডেভেলপার অপশন কি নিরাপদ?
হ্যাঁ। ডেভেলপার অপশন কোনো রকম সিকিউরিটি কিংবা কারিগরি ক্ষতিসাধন করে না। ডেভেলপার অপশন সর্বদা ডিজেবল থাকার কারণ হলো এগুলো তেমন ব্যবহৃত হয় না। তবে এর কিছু কিছু ফিচার রয়েছে যেগুলো মারাত্মক ক্ষতিকর। কিছু ফিচার চালু করার ফলে ফোন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে৷ তাই অতিরিক্ত প্রয়োজন ছাড়া এগুলো অন না করার জন্য অনুরোধ রইলো।
ডেভেলপার অপশন কিভাবে চালু করবো?
ডেভেলপার অপশন চালু করার জন্য মোবাইলের সেটিংস অপশনে গিয়ে স্ক্রল করে একেবারে নিচে যেতে হবে। সেখানে About Device অথবা About Phone নামে একটি অপশন পাওয়া যাবে। সেখানে ক্লিক করতে হবে।
এবার নিচের দিকে স্ক্রল করে Build number অপশনটিতে ৭ বার ট্যাপ করতে হবে। তাহলে আপনি একজন ডেভেলপার হিসেবে একটা বার্তা প্রদর্শিত হবে।
ডেভলপার অপশনে কি কি ফিচার রয়েছে এবং সেগুলোর কাজ কি?
১। Stay awake: ফোন চার্জে থাকা অবস্থায় ফোনের আলো যদি সর্বক্ষণ জ্বালিয়ে রাখতে চান তবে এ ফিচারটি সাহায্য করবে। তবে প্রয়োজন ছাড়া এটি চালু করা অনুচিত। এতে ব্যাটারি তাড়াতাড়ি ডেড হবে।
২। Show Touches: এ ফিচারটি চালু করার ফলে আপনি ফোনের যেখানেই টাচ করবেন একটি ছোটো বৃত্ত সেখানেই প্রতীয়মান হবে। এটি খুব কার্যকর একটি ফিচার।
৩। Show Pointer location: এটির মাধ্যমে আপনি যেখানেই টাচ করবেন সেখানেই একটি রেখা প্রদর্শিত হবে।
৪।Show layout boundaries: এ ফিচারটি চালু করা হলে প্রতিটি লাইনের পর নির্দিষ্ট বাউন্ডারি তৈরি হবে।
৫। Force RTL layout: এটি অনেক অসাধারণ একটি ফিচার। আমরা সাধারণত বামপাশ থেকে লিখি এবং ফোনের সব লেখাগুলোও বাম পাশ দিয়েই শুরু। কিন্তু এ ফিচারটি চালু করার ফলে সবরকম লেখা ডানপাশ থেকে প্রতীয়মান হবে। অর্থাৎ সব কিছু ডানপাশে সরে যাবে।
৬। Window animation scale: এটি খুবই কার্যকর একটি মাধ্যম। সাধারণত ফোনের কোনো কিছুর ওপর ক্লিক করা হলে এটি লোড বা চালু হতে ১.৫ সেকেন্ড সময় নেয়। কিন্তু এই ফিচারটির মাধ্যমে আপনি চাইলে এই লোডিং সময় কমাতে পারেন অথবা লোডিং অ্যানিমেশন বন্ধই করে দিতে পারেন।
৭।Simulate Secondary Display: এই ফিচারটির মাধ্যমে আপনি বর্তমান ডিসপ্লের উপর নতুন আরেকটি ডিসপ্লে ওপেন করতে পারেন এবং সেটার রেজ্যুলিউশন ঠিক করে দিতে পারেন।
৮। Debug CPU overdraw: এ ফিচারটি চালু করার ফলে আপনার ফোনের পুরো স্ক্রিন নির্দিষ্ট বর্ণ ধারণ করবে। কারণ ছাড়া এটি চালু করবেন না।
৯৷ Turn on 4x MSAA: আপনি যদি গেইমার হয়ে থাকেন তবে এটি আপনার একান্ত কাজে আসতে চলেছে। এটি হচ্ছে স্মার্টফোন এর পৃথক গ্রাফিক্স ডিভাইস৷ আমরা যেমন পিসি, ল্যাপটপে পৃথক গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করে থাকি ঠিক তেমনি এটিও মোবাইলের গ্রাফিক্স কার্ড হিসেবে কাজ করে। গেম খেলার সময় এটি অন করে দেবেন। এতে গেমের গ্রাফিক্স আরো ভালো দেখাবে।
১০। Simulate Color space: এটির মাধ্যমে ফোনের স্ক্রিনকে বিভিন্ন কালারে রুপান্তর করা যায়।
১১। Show CPU usage: CPU এর অবস্থান জানতে হলে এটি অন করুন। এছাড়াও এটি CPU এর বিভিন্ন তথ্য দিয়ে আপনাকে সাহায্য করতে পারে। দরকার না হলে এটি অফ করে রাখুন।
১২। Do not keep activities: এটি প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ একটি ফিচার। আমরা প্রায়ই মিডলবাটনে ক্লিক করে মাল্টি অ্যাপ্স ওপেন করি। এতে আমাদের ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকা অ্যাপ্স আমাদের কাজ স্লো করে দেয় এবং অধিক ক্যাশ ডাটা জমা করে। তাই এ ফিচারটির মাধ্যমে ব্যাকগ্রাউন্ডে একই সময়ে চলনশীল সকল ধরনের কাজ বন্ধ করে দেওয়া যায়।
১৩। Limit background process: এ ফিচারটিতে আপনি সিলেক্ট করতে পারবেন যে কতগুলো অ্যাপ্স একই সাথে ব্যাকগ্রাউন্ডে চলবে। এটি Standard দেওয়াটাই শ্রেয়।