Cheap price backlink from grathor: info@grathor.com

সেন্টমার্টিনে ভেসে আসা রহস্যময় বার্জ

আমরা অনেকেই “আলিফ লায়লা” বা “এক হাজার এক আরব্য রজনী”র গল্প পড়েছি বা টেলিভিশন সিরিয়ালে দেখেছি। যেখানে বাদশাহ শাহরিয়ার এর বুদ্ধিমতী বিবি শাহজাদী শাহরাজাদ বাদশাহ কে প্রতিরাতে একটি করে ইন্দ্রজাল সৃষ্টিকারী জাদুকরী গল্প শুনিয়ে তার মন ভোলাত যাতে আরো একটি রাত গল্পগুজবে কেটে যায় এবং সে সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরতে পারে। কারন বাদশাহ এতটাই নারী বিদ্বেষী ছিলেন যে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন প্রতি রাতে ভোর হবার আগেই তিনি একজন নারীকে হত্যা করবেন।

কিন্তু বুদ্ধিমতী শাহরাজাদ তার গল্পের মায়াজালে প্রতিরাতে বাদশাহকে এমনভাবে আবিষ্ট করে রাখতেন যে বাদশাহ তার গল্পের নেশায় বুদ হয়ে তার প্রতিজ্ঞা ভুলে যেতেন আর গল্পের নেশায় রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে যেত। বুদ্ধিমতী শাহজাদীও এভাবে প্রতিরাতে মৃত্যু কে ফাঁকি দিতেন। এভাবে “একহাজার এক আরব্য রজনী” তিনি কাটিয়েছিলেন বাদশাহকে গল্প শুনিয়ে। যাইহোক তার অনেক গল্পের মাঝে একটি ছিল দুঃসাহসী নাবিক সিন্দাবাদের সাতটি সামুদ্রিক অভিযানের গল্প।

বাগদাদ শহরে জন্মগ্রহণকারী নাবিক সিন্দাবাদ তার দুঃসাহসিক সব সামুদ্রিক অভিযানে কখনো প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পড়েছেন, কখনো জাহাজডুবি হয়ে রহস্যময় দ্বীপে আশ্রয় পেয়েছেন, আবার কখনো অযাচিতভাবে পেয়ে গেছেন সাত রাজার গুপ্তধন। সম্প্রতি বাংলাদেশেও ঘটে গেছে এমন একটি ঘটনা। যা নিয়ে চলছে অনেক সমালোচনা, জল্পনা কল্পনা। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর কবলে পড়ে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন এ ভেসে এসেছে একটি রহস্যময় ভুতুড়ে জাহাজ। কি আছে এই রহস্যময় জাহাজে? তবে কি সেন্টমার্টিনবাসীর কপালে অযাচিতভাবে জুটে গেল সিন্দাবাদ নাবিকের সাত রাজার গুপ্তধন? জানতে হলে পুরো আর্টিকেলটি মনযোগ সহকারে পড়ুন।

সেন্টমার্টিন এর ছেড়া দ্বীপ এ ভেসে আসা জাহাজটি মূলত কি?

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর কবলে পড়ে সেন্টমার্টিন এর ছেড়া দ্বীপ এ আটকে যাওয়া জলযানটি মূলত একটি বার্জ। এটার উপরের দিকটা খোলা, সাইডে রোলিং দেওয়া। ভেতরে ছোটখাটো স্টেডিয়ামের মতো মনে হবে। বিভিন্ন রকম কার্গো এটাতে লোড করা হয়। এটাকে সামনে থেকে মোটা রশি দিয়ে টেনে নিয়ে যায় একটি ছোট জাহাজ। যে জাহাজটি টেনে নিয়ে যায় সেটিকে বলে টাগ বোট। পুরো ব্যাপারটাকে বলে টোয়িং।

এত বড় বার্জটিকে সহজেই ওই জাহাজ টেনে নিয়ে যেতে সক্ষম। বার্জের নিজস্ব কোন ইঞ্জিন থাকে না। তাই বলা যায় সকল বার্জই জাহাজ কিন্তু সকল জাহাজ বার্জ নয়। সেন্টমার্টিন এ ভেসে আসা বার্জটি জনশূন্য ছিল। সেটাই স্বাভাবিক, কারন বার্জটিতে জনমানব থাকার মত কোন কেবিন নেই। জনমানবহীনতা জাহাজটিকে সেন্টমার্টিনবাসী ও পর্যটকদের কাছে আরো ভূতুড়ে করে তুলেছে।

বার্জটিতে কি পণ্য ছিল?

পাঠকদের হতাশ করেই জানাতে হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ে ভেসে আসা বার্জটিতে মেলেনি রবার্ট লুইস স্টিভেনসন এর ট্রেজার আইল্যান্ড এর মত কোন গুপ্তধন অথবা পাইরেটস অব দ্যা ক্যারিবিয়ান এর মত রাশি রাশি হীরে, জহরত বা অ্যাজটেক গোল্ড। উৎসুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জাহাজের দড়ি বেয়ে উপরে উঠে কোন মানুষ বা গুপ্তধন দেখতে পাননি। তবে ভেতরে কয়েকটি কক্ষ তালাবদ্ধ অবস্থায় পেয়েছেন। অনেক কন্টেইনার ও অন্যান্য পণ্যদ্রব্য সেখানে ছিল। বার্জটি এর আগেও চারবার বাংলাদেশে পণ্য নিয়ে এসেছিল। বার্জটি মূলত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অর্ডারে কুতুবদিয়ায় চলমান সাবমেরিন প্রকল্পের জন্য পাথর এনেছিল মালয়েশিয়ার লুমুট বন্দর থেকে। ১০ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার এই বার্জ প্রায় ৯ হাজার ৯০০ টন পাথর এনেছিল। এসব পাথর খালাশ করা হয় কুতুবদিয়ায়।

জাহাজটি কোন দেশের মালিকানাধীন?

সেন্টমার্টিনবাসী ও পর্যটকরা যেটিকে ভুতুড়ে বা রহস্যময় জাহাজ বলছেন তার গায়ে এর নাম লেখা রয়েছে এম আর ৩৩২২। এর সূত্র ধরে জানা যায় এটি সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী একটি বার্জ। মেরিনা টোয়েজ প্রাইভেট লিমিটেডের মালিকানায় নিবন্ধনকৃত এ জাহাজটি ১১০.৬ মিটার দীর্ঘ এবং ৩০ মিটার চওড়া একটি মালবাহী বার্জ। এটির ধারনক্ষমতা প্রায় ১০ হাজার টন।

কিভাবে এটি সেন্টমার্টিন এর ছেড়া দ্বীপ এ ভেসে এল?

কুতুবদিয়ায় পাথর খালাস সম্পন্ন করার পর গত ২০ অক্টোবর বার্জটি পুনরায় ফেরত যাচ্ছিল। এটি পণ্য নিতে যাচ্ছিল মালেশিয়ার লুমুট বন্দরে। সেখান থেকে পণ্য ভর্তি করে অন্যকোনও দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। এর মাঝে বাংলাদেশে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। উপকূলীয় এলাকায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়। কোস্টগার্ডের তথ্যমতে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও জোয়ারের স্রোতে বার্জটি কোন কারনে টাগবোট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ও সেন্টমার্টিন এর ছেড়াদ্বীপ এ আছড়ে পড়ে। পরবর্তীতে এর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জাহাজটিকে ঘিরে নানা রহস্য ও জল্পনা, কল্পনার সৃষ্টি হয়।

আটকে যাওয়া বার্জটির ভবিষ্যত কি?

সিঙ্গাপুর এর পতাকাবাহী বার্জটি সেন্টমার্টিন এর সর্বোচ্চ জোয়ার এর সময় তীরে আটকা পড়েছে। এতে করে এটি দ্বীপের ঠিক যতটুকু উচ্চতায় গিয়ে মাটিতে আটকা পড়েছে ততটুকু জোয়ার না হলে এটি ভাসবে না। তাই এটিকে নামিয়ে স্বাভাবিকভাবে ভাসাতে সময় লাগবে। ঝড়ের পরদিন টাগবোট দিয়ে উদ্ধার করার চেস্টা করেও কাজটি করা সম্ভব হয় নি। এখন চট্টগ্রামের বেসরকারি উদ্ধারকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এটিকে সাগরে নামানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সেন্টমার্টিন এ ঝড়ের কবলে ভেসে এসে আটকে পড়া বার্জটি ছিল দ্বীপবাসী ও পর্যটকদের কাছে একটি ব্যাতিক্রমি ও অভূতপূর্ব ঘটনা। সিত্রাং ঘূর্ণিঝড়ে সেন্টমার্টিন এর অনেক এলাকা সমুদ্রের পানির নীচে তলিয়ে গিয়েছিল। তবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের তৎপরতায় ক্ষয়ক্ষতি ছিল খুব সামান্যই। এর মাঝে ভেসে আসা জাহাজটি দ্বীপবাসী ও পর্যটকদের একটি দারুন রহস্য উপহার দিয়েছিল।

Related Posts

5 Comments

Leave a Reply

Press OK to receive new updates from Firstsheba OK No