নাপ্পি তৈরির কৌশল

বাংলাদেশের বসবাসরত সকল পাহাড়ি আদিবাসীর প্রধান শুটকি মাছ হল চিদোল। চিদোল ছাড়াও পাহাড়ের বাজারে নানা ধরনের শুটকি মাছ পাওয়া যায়। তবে অন্যান্য শুটকি চিদোলের মত অতটা জনপ্রিয় নয়। কেননা এই চিদোল শুটকি মাছ ছাড়া পাহাড়ি রান্নার আসল স্বাদ পাওয়া যায় না।

পাহাড়িরা এই চিদোল দিয়ে অনেক মজাদার রান্না করতে পারে। মাছ ও মাংস বাদে প্রায় সব ধরনের সবজিতে এ চিদোল ব্যবহার করা হয়। পাহাড়ি বাজারে আনাচে-কানাচে প্রায় সব জায়গায় এই চিদোল পাওয়া যায়। অনেক পাহাড়ি ও বাঙালিদের কাছে এটি নাপ্পি নামে পরিচিত।

নাপ্পি কত প্রকারের

নাপ্পি দুই প্রকারের হয়।

১. মাছের নাপ্পি বা চিদোল

২. চিংড়ি মাছের নাপ্পি বা চিদোল

পাহাড়ি বাজারে মাছের চিদোল সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় এবং দামেও বেশ কম। তবে চিংড়ি মাছের চিদোলের স্বাদ বেশি। মাছের চিদোল দেখতে একটু হালকা কালো বর্নের ও চিংড়ি মাছের চিদোল লালচে বর্নের হয়। মাছের চিদোলের তুলনায় চিংড়ি মাছের চিদোল একটু দাম বেশি। তাছাড়া মাছের চিদোল কিছুটা অপরিস্কার মাছের ময়লা বেশি থাকে। যারা বানিজ্যিকভাবে চিদোল তৈরি করে তারা মাছগুলো ভালোকরে পরিস্কার করেনা। অন্যদিকে চিংড়ি মাছের ময়লা কম থাকে বিধায় সহজে পরিস্কার করা যায়।

নাপ্পি তৈরির কৌশল

নাপ্পি (চিদোল) তৈরি করার জন্য প্রথমে ছোট ছোট মাছ বাছাই করতে হবে এবং সেই মাছগুলো ভালোভাবে পরিস্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। মাছগুলো থেকে পানি শুকিয়ে নিয়ে পরিমানমত লবন মেশাতে হবে। এবার এই মাছগুলোকে একটি পরিস্কার পাত্রে রোদে শুকাতে হবে। খেয়াল রাখবেন মাছগুলো শুকানোর সময় যাতে মশা-মাছি না পড়ে।

মাছগুলো যখন কিছুটা শুকনা হয়ে আসবে তখন একটা মরিচ বাটা দিয়ে মাছগুলোকে মিহি করে পিষিয়ে নিতে হবে। যদি একদম মিহি না হয় আবারো কিছুটা রোদ্রে শুকিয়ে পেষে মিহি করে নিতে হবে। সামান্য পরিমান পানি মিশিয়ে গুড়া করে নিতে হবে। এভাবে মাছগুলো গুড়া করার পর ৩-৪ দিন পর্যন্ত কলা পাতা দিয়ে মুড়িয়ে একটি পাত্রে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। তারপর ৩-৪ দিন ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখার পর এবার সেখান থেকে তুলে একটি পরিস্কার খাঁচায় অথবা পাত্রের নিচে কলাপাতা বিছিয়ে ঠান্ডা জায়গায় সংগ্রহ করে রাখুন।

নাপ্পি কোথায় তৈরি করা হয়

বর্তমানে বিভিন্ন শুটকি ও নাপ্পি বা  চিদোল উৎপাদনের মূল কারখানা হল কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চলে। সেখানে বিভিন্ন প্রকার সামুদ্রিক মাছ দিয়ে চিদোল তৈরি কার হয়। তারপরে রয়েছে পার্বত্য এলাকা রাঙ্গামাটি। রাঙ্গামাটিতে মূলত চাকমারা চিদোল তৈরি করে থাকে। চাকমা আদিবাসীরা সেখানে ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিদোল উৎপাদন করে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে থাকে। এছাড়াও খাগড়াছড়িতে কয়েকটি জায়গায় চিদোল তৈরি হয়।

নাপ্পি কোথায় বিক্রি হয়

বর্তমানে পার্বত্য এলাকায় প্রতিটি হাট-বাজারে চিদোল বিক্রি করা হয়। এলাকাভেদে নাপ্পির দাম একেক রকম। তবে আনুমানিক গড়ে এর বাজার মূল্য ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। চিংড়ি মাছের নাপ্পির দাম একটু বেশি। কিছু কিছু ব্যবসায়ী নাপ্পি হোম সার্ভিস দিয়ে থাকে।

Related Posts