চাকমা সাংস্কৃতির ঐতিহাসিক আজ ফেলে দেওয়া বস্তুর মত অবহেলা-অপরির্চযায় তা দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে

“আসসালামু আলাইকুম সবাইকে”                                                                                       আশা করি ভাল আছেন পাঠক ও পাঠিকাগন ,আজ পার্বত্য  নিয়ে কিছু আলোচনা করতে যাচ্ছি  কোন ভুল আপেক্ষ চিন্তা করবেন না । আদিযুগে এই বাংলায় অনেক রাজ-রাজা শাসন করে গেছেন তাদের মধ্য অনেক রাজা তাদের ঐতিহাসিক প্রাসাদ-ভবন স্তাপন করে গেছেন যা আজো আমরা বর্তমানে নিদর্শন করে যাচ্ছি ।

ইতিহাসের পাতায় সাঙ্খী হয়ে আজো দাঁড়িয়ে আছে সেই প্রাচীন দেওয়ালগুলো যা আমাদের সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখছে । বাইরে দেশ গুলো দেখেন তাদের দেশে প্রাচীন নির্দশনগুলোকে যেভাবে যত্ন করে রাখেন,যা আমদের দেশে তা অর্ধেকও না ।তাদের জাতির গড়ে ওটা যে সূচনা তার বিকাশ অন্যদের কাছে পরিচয় করার জন্য তারা সেইগুলোকে পর্যটকে গড়ে তুলেন ।

আমরা হয়তো অনেক কাজে ব্যস্ত থাকি তাই নিজের সাংস্কৃতিকে ভুলে যাচ্ছি আর তা কি ভাবে আছে তা কারো কাছে জানার মত সময়ও নেই ।তাই আজ আমরা বাংলাদেশের চাকমা রাজার রেখে যাওয়া ঐতিহাসিক প্রাসাদ-ভবন স্তাপনের কথা জানবো যা আজ ফেলে দেওয়া পুরোনো বাড়ির মত পড়ে আছে ।

বর্তমানে বাংলাদেশে চাকমা রাজার রেখে যাওয়া ইতিহাসিক প্রাসাদ-ভবন স্তাপন হিসেবে দেখতে পারি রাঙ্গামাটি ডিসি বাংলার পাশে চাকমা রাজার রাজবাড়িকে ।তবে তার রেখে যাওয়া আরো অন্য ঐতিহাসিক প্রাসাদ-ভবন স্তাপনের কথা হয়তো অনেকে সঠিক ভাবে জানে না ।

ঠিক রাঙ্গামাটিতে অবস্তিত রাজবাড়ির মত আরেক তা রাজবাড়ির প্রাসাদ রয়েছে যা কেউ জানে না তা চট্রগ্রামে রাঙ্গুনিয়াই রাজা নগরে।তা আজ ফেলে দেওয়া বস্তুর মত অবহেলা-অপরির্চযায় তা দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ।আজ যদি সেই স্থানকে ঠিকমত পরির্চযা করা যেত একটি পর্যতন কেন্দ্র হত আর চাকমা সংস্কৃতির ইতিহাস সম্পর্কে আরো জনগন তা স্পর্শভাবে জানতে পারত ।

বাংলাদেশের যে বৃহত্তম নৃগোষ্ঠী চাকমাদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তারা মূলত উপরের বার্মার (বর্তমানে মিয়ানমার) বাসিন্দা এবং তাদের নিজস্ব রাজা ছিল। ১৪১৮ সালে চাকমা রাজা মুওয়ান তানিকে আরাকান রাজা তাঁর রাজ্য থেকে বিতাড়িত করেছিলেন। রাজা তাঁর সমস্ত লোককে নিয়ে চট্টগ্রামে প্রবেশ করলেন।

চট্টগ্রামে মাতামুহুরী নদীর তীরে আলীকদমে বসতি স্থাপন করতে রাজা তার প্রজাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এছাড়াও রামু ও টেকনাফের এগারোটি গ্রামও তাদের হয়েছিল। চাকমা রাজ্যটি প্রথম বান্দরবান জেলার আলীকদমে ১৬৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

১৭৩৭ সালে চট্টগ্রামে শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজানগরে একটি শহর নির্মিত হয়েছিল। রাজনগর ১৭৩৭-১৮৭৪ সাল থেকে ১৩7 বছর রাজ্যের রাজধানী হিসাবে কাজ করেছিলেন। রাজা ভুবন মোহন রায় তাঁর ‘চাকমা রাজ বংশের ইতিহাস’ (চাকমা রাজবংশের ইতিহাস) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে রাজবাড়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের মধ্যে ১৯ ও ২০ শতকের মধ্যে বেশ কয়েকবার স্থানান্তরিত হয়েছে ।

প্রথম চাকমা রাজপ্রাসাদটি ১৭৮২ থেকে ১৭৮৭ সালের মধ্যে রাজা জন বক্স খান দ্বারা রাজনগরে নির্মিত হয়েছিল। এটি আয়তক্ষেত্রাকার, দ্বিতল ভবন ছিল। এটির নিচতলায় সাতটি সহ ১০ টি কক্ষ ছিল। প্রাসাদের প্রতিটি ঘরে খিলান দরজা ছিল, পাশাপাশি দেয়ালে ফুল এবং লতাযুক্ত নকশাগুলি ছিল। রাজবাড়ির মাঠে একটি বৌদ্ধ মন্দির ছিল, ১৮৪৪ থেকে ১৮৭০ সাল পর্যন্ত রানী কালিন্দী তৈরি করেছিলেন।

সেখানে রাজা ১২.২০% শতাংশ জুড়ে জায়গায় তার রাজ প্রসাদ,রাজা দরবার,সাগর দিগী,শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি স্তাপন করেন।১৮৭৪ সালে রাজা হরিশ চন্দ্র রায় কর্তৃক চাকমার রাজধানী রাঙ্গামাটি জেলায় স্থানান্তরিত হয়। রাজনগরের রাজপ্রাসাদটি পরিত্যক্ত হয়ে যায় এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এটি ধীরে ধীরে জরাজীর্ণ হয়ে যায়।

এখন পুরো প্রাসাদ কমপ্লেক্সটি শ্যাওলা এবং আগাছায় আবৃত এবং এটি ধ্বংসের পথে। দেয়ালগুলিতে বড় ফাটলগুলি বিকশিত হয়েছে এবং ছাদ পুরোপুরি ভেঙে গেছে । দ্বিতীয় রাজকীয় প্রাসাদটির নির্মাণকাজটি ১২ বছর পরে রাজা ভুবন মোহন রায় রাঙ্গামাটিতে ১৯১৪ সালে সমাপ্ত করেছিলেন।

দ্বিতল প্রাসাদটি একটি টিলার চূড়ায় অবস্থিত। কিন্তু প্রাসাদটি ১৯৬২ সালে কাপ্তাই হ্রদের জলে ডুবে ছিল। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য কর্ণফুলী নদীর তীরে কৃত্রিম হ্রদ তৈরি করা হয়েছিল। দীর্ঘ খরার কারণে জলের স্তর মারাত্মকভাবে হ্রাস পাওয়ায় শতাব্দী প্রাচীন দ্বিতীয় প্রাসাদটির দেহাবশেষ ১৯৮৬ সালে এবং তারপরে ২০০৬ সালে আবার কাপ্তাই হ্রদে পুনরুত্থিত হয়েছিল।

নিমজ্জিত রাজপ্রাসাদ সংরক্ষণের জন্য কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যা এখন বেশির ভাগই পানির তলদেশে পতিথ থাকতে দেখা যাই।১৯৬২ সালে রাঙ্গামাটির রাজদ্বীপ গ্রামে বর্তমান রাজা দেবশীষ রায়ের বাবা রাজা ত্রিদিব রায় আরেকটি রাজকীয় আবাস নির্মাণ করেছিলেন।

দুর্ভাগ্যক্রমে, টিনের ছাদযুক্ত কংক্রিটের ঘরটি ২০১০ সালে অগ্নিকাণ্ডে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। এক ঘণ্টার মধ্যে, রানী কালিন্দির অপরিবর্তনীয় আইভরি সিংহাসন সহ অনেক মূল্যবান নিদর্শন এবং ইতিহাসিক দলিল নষ্ট হয়ে যায়।

এই রাজবাড়ির অতিহ্য মূল্য দেশের জন্য বিশাল। এই ইতিহাসিক রাজকীয় কাঠামো সংরক্ষণ ও সংরক্ষণের জন্য কর্তৃপক্ষের এগিয়ে আসা উচিত ।যা আগামিকালের প্রজম্মের জন্য এটি চাকমা সাংস্কৃতিকে পরিচয় করিয়ে দিবে তাই সকলকে এগিয়ে আশা আমাদের দরকার ।

প্রিয় পাঠক ও পাঠিকাগন আজ এখানে শেষ করলাম আবার নতুন টপিক নিয়ে দেখা হবে ।                ধন্যবাদ ।

Related Posts

2 Comments

মন্তব্য করুন