বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় একটি খেলা হল ক্রিকেট। আর দক্ষিণ এশিয়ায় খেলাটি জনপ্রিয়তাতো আরো বেশি। ক্রিকেট খেলার অন্যতম প্রধান একটি বিষয় হল ক্যাপ্টেন্সি বা অধিনায়কত্ব। তাকে অনেক জটিল সিদ্ধান্ত পালন করতে হয়। কোন দল জিতলে যেমন বেশি কৃতিত্ব ক্যাপ্টেন পায়। তেমনি হারলেও রোষানলে তাকেই পড়তে হয়। এখানে সর্বকালের সেরা ক্যাপ্টেন নির্বাচনে তাদের পারফর্মেন্সকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ;যা তাদেরকে সংক্ষিপ্ত তালিকায় এনেছে। তো চলুন বন্ধুরা আজকে আমরা জেনে নেই সর্বকালের সেরা ৫ জন ক্রিকেট ক্যাপ্টেন কে:-
৫. ইমরান খান:
সর্বকালের সেরা ৫ জন ক্রিকেট ক্যাপ্টেনের মধ্যে
ইমরান খান তালিকায় পঞ্চম স্থানে আছেন।
পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ইমরান খান সত্তরের দশকে পাকিস্তান দলের মজিদ খান, জাহির আব্বাস, জাভেদ মিঁয়াদাদ, সেলিম জাফরের মত মহান খেলোয়াড় থাকা শর্তেও দলটি জয়ী হওয়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারেনি। তখন দলের জয়ের পরিবর্তে ব্যক্তিগত পারফর্মেন্সই যেন বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই সময় সবকিছু ঠিক করার জন্য এমন একজন নেতা প্রয়োজন ছিল যিনি দলের মধ্যে সেই সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারে। এই কাজটি হয় যখন ইমরান খান ১৯৮২ সাসালে সালে পাকিস্তান দায়িত্ব নেন। তিনি দলেরের মধ্যে থাকা এসব জটিলতা দূর করেন। তার সময়ে পাকিস্তান কোন টেস্ট ম্যাচে ড্র করার লক্ষ্যে মাঠে নামেনি। তিনি ছিলেন ইতিহাসের প্রথম অধিনায়ক যিনি হোম সিরিজে নিরপেক্ষ আম্পায়ার দাবি করেছিলেন এবং সেটিও তৎকালীন শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। প্রথম পাকিস্তানের অধিনায়ক যিনি ভারতকে ভারতের মাটিতে পরাজিত করেন। তবে তার অধিনায়কত্বের প্রকৃত উজ্জ্বলতা দেখা যায় ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপে পাকিস্তান ইংল্যান্ডকে হারিয়ে তাদের একমাত্র বিশ্বকাপ জয় করে।
৪. মহেন্দ্র সিং ধোনি:
সর্বকালের সেরা ক্রিকেট ক্যাপ্টেন এর তালিকায় চতুর্থ স্থানে আছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।
২০০৭ সালে ভারত যখন বাংলাদেশের কাছে হেরে বিশ্বকাপ গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ে যায়; তখন ভারতীয় ক্রিকেট দল এই যে আমূল পরিবর্তন আসবে তার জানাই ছিল। রাহুল দ্রাবিড় পদত্যাগ করবেন তা মোটামুটি সবাই ধারণা করেছিল। কিন্তু তাহলে শূন্যস্থানে আসবে কে এই পরিস্থিতিতে?তখন মহেন্দ্র সিং ধনীকে অধিনায়কত্বে এনে তখনকার ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ভালোও সমালোচিত হয়। কিন্তু এই সমালোচিত সিদ্ধান্তই পরে ভারতীয় ক্রিকেটের ভাগ্য পরিবর্তন করে দেয়। তার ঠান্ডা মাথায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ইন্ডিয়ান ক্রিকেট টিমে যেন প্রাণ ফিরে পেয়ে যায়। চেন্নাইয়ের ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রাও তার মাথা গরম করতে পারেনা। তিনি পরিচিত হয়ে উঠেন “ক্যাপ্টেন কুল” নামে। ধোনিকে ক্যাপ্টেন করার ফল হাতেনাতে পায় বিসিসিআই। তার নেতৃত্বেই ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ঘরে তুলে ভারত। এরপর ধোনির নেতৃত্বে ভারত ঘরেতোলে এশিয়া কাপ, আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ, চ্যাম্পিয়ন ট্রফি। নেতৃত্বে ২০০৯ সালের ২০০৯ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো টেস্ট রেংকিং’এ এক নম্বরে উঠে আসে।
৩. রিকি পন্টিং:
তালিকায় পরবর্তী স্থানে অর্থাৎ তৃতীয় স্থানে আছেন রিকি পন্টিং।
2002 সালে ওডিআই থেকে স্টিভ ওয়াহ’র পদত্যাগের পর অষ্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক হন ক্রিকেট বিশ্বের সেরা পুল শট খেলোয়াড় রিকি পন্টিং। অস্ট্রেলিয়া ওয়ানডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ২০০৪ টেস্ট অধিনায়কত্ব পাবার পর থেকেই তিনি শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার জয়রথ চালু রাখেন প্রায় এক দশক। টপরেটেড ব্যাটসম্যান, অ্যাথলেটিক ফিল্ডার এবং বিধ্বংসী ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে ক্যাপ্টেন রিকি পন্টিং’এর অধীনে অস্ট্রেলিয়ানরা শাসন করে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। অস্ট্রেলিয়া ২০০৩ ও ২০০৭ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ; ২০০৬ ও ২০০৯ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং ২০০৬-২০০৭ মৌসুমে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ঊষার এশেজ শিরোপা অর্জন করে। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের প্রায় সকল ক্রিকেট প্লেইং দেশগুলোতেই টেস্ট ম্যাচ এবং একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে জয়লাভ করে। তিনি ২০১১ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কত্ব করেন।
২. স্টিভ ওয়াহ:
সর্বকালের সেরা অধিনায়ক ক্যাপ্টেন এর দ্বিতীয় স্থানে আছেন স্টিভ ওয়াহ।
তার নেতৃত্বে ক অস্ট্রেলিয়া হয়ে ওঠে সত্তর ও আশির দশকের ওয়েস্ট ইন্ডিজের মত; যে দল ছিল অজেয় ও অদ্বিতীয়। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে প্রথম দিকে অস্ট্রেলিয়ার শুরু ভালো না হওয়ায় চাপের মুখে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। অধিনায়কত্বের পরীক্ষা পরীক্ষায় সকল বাধা-বিপত্তি বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ফাইনালে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপ বিজয় লাভ করে অষ্ট্রেলিয়া। ১৯৯৭ থেকে ২০০২ সাল ওডিআই এবং ২০০৪ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব পালন করেন। তার অধিনায়কত্বে অস্ট্রেলিয়া ৫৭ টির মধ্যে ৪১টি টেস্ট জয় লাভ করে যা সত্যি যে কোন অধিনায়ক এর কাছে অবিশ্বাস্য ও স্বপ্নের মত।
১. ক্লাইভ লয়েড:
তালিকায় সর্বকালের সেরা ক্রিকেট ক্যাপ্টেন হল ক্লাইভ লয়েড।
তার সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল তার দলীয় শক্তি। সলিড ব্যাটিং লাইনআপ এবং ছাড় না দেওয়ার মানসিকতার এমন দলকে অধিনায়কত্ব করা সহজই ছিল। কিন্তু সমস্যা হল তাদের পারফর্মেন্স ধরে রাখা। আর এইটা ধরে রাখার জন্য চাপও ছিল বেশি। তিনি ভালভাবেই নিয়ন্ত্রন করেছেন। আর এজন্যই ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর তার অধিনায়কত্বেআ ওয়েস্ট ইন্ডিজ হ্যাটট্রিকসহ কাছে চলে গিয়েছিল, যেখানে ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে যায়। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ৭৭% জয়ের রেকর্ড ছিল। তার অধিনায়কত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ টানা ২৭ টি টেস্ট ম্যাচ অপরাজিত ছিল;যার মধ্যে ছিল টানা ১১ টি জয়. সর্বোপরি ক্রিকেটে তার সাফল্য এবং খেলোয়াড় হিসেবে তাঁর অসামান্য কৃতিত্বের জন্য তিনি ইতিহাসের সেরা ক্রিকেট ক্যাপ্টেন।
তো বন্ধুরা, আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লাগলো? কমেন্ট করুন। ভালোলাগলে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
আগের আর্টিকেলটি পড়তে ক্লিক করুন।