আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আশা করি সবাই ভালো আছেন। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আমিও ভালো আছি। আজকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব ফুচকার মসলা বানানোর রেসিপি । আশা করি আপনাদের অনেক ভাল লাগবে।
ফুচকা কি ?
বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত ও মজাদার খাবার গুলোর একটি হচ্ছে ফুচকা। বাংলাদেশে এমন কাউকে পাওয়া যাবে না যে কোনোদিনই এই ফুচকা খায়নি। শুধু বাংলাদেশে নয় বরং ভারতেও এই ফুচকা অত্যন্ত জনপ্রিয়। একে পানি পুরিও বলা হয়। এটি মূলত একটি স্ট্রিট ফুড। আর স্ট্রিট ফুড হওয়ায় এটি আমাদের জন্য কতটা স্বাস্থ্যকর বা উপকারী সেটাও চিন্তা করতে হবে। কারণ বাহিরের বেশিরভাগ খাবারই সাধারণত খুবই খারাপ ও নোংরা পরিবেশে বানানো হয়।
তাই এসব খাবার এড়িয়ে চললেই ভালো হয়। বরং ফুচকা আমাদের ঘরে বানানো উচিত কারণ যেহেতু আপনি নিজেই সব বানাচ্ছে সেহেতু এটি কতটুকু স্বাস্থ্যকর সেটা আপনি জানেন আর এ খাবার মজাদারও হবে। কিন্তু ঘরর ফুচকা বানানো হয় না কারণ ফুচকা বানানো খুবই সময়সাপেক্ষ একটা বিষয়। এবং সর্বদাই ফুচকা ভালো হবে না বা মজা হবে না এই আশঙ্কা থাকে। কিন্তু আজকের পোস্টে ফুচকা বানানোর সবচেয়ে সহজ, ভালো ও সময় সাশ্রয়ী উপায় বলতে যাচ্ছি।
ফুচকার মসলা বানানোর রেসিপি
উপকরণঃ আজওয়াইন, ধনে গুঁড়া, গোল মরিচ, জিরা, লাল মরিচ।
প্রথমে একটি পাত্রে আট-নয়টি লাল মরিচের সাথে পরিমাণ মতো আজওয়াইন, ধনে গুঁড়া ও জিরা পরিমাণ মতো নেন। এবং তা তাওয়ায় দিন। কিছুক্ষণ তাওয়ায় ছ্যাঁকার পর তার সঙ্গে গোল মরিচ দিয়ে গ্রাইন্ডিং করুন বা পিষুন। তাহলেই ফুচকার মসলা হয়ে যাবে।
ফুচকা তৈরির উপায়
আমরা সবাই জানি, ফুচকার সাধারণত তিনটি অংশ থাকে। যথাঃ পুরি বা মূল ফুচকা, ভর্তা যা পুড়ি বা ফুচকার মধ্যে দেওয়া হয় আর তেঁতুলের টক। এই তিনটি কিভাবে বানাবেন তা নিচে দিচ্ছি।
১. পুড়ি বা ফুচকাঃ
উপকরণ / যা যা লাগবেঃ
ময়দা দুই কাপ (পরিমাণ মতো), সুজি আধা কাপ(পরিমাণ মতো), খাবার সোডা এক চা চামচ, সরিষা গুঁড়া এক চা চামচ, সামান্য তেল (পরিমাণ মতো), সামান্য লবণ (পরিমাণ মতো), পানি (পরিমাণ মতো)।
প্রথমে একটি বাটি/প্লেটে পরমাণ মতো (উপরের উল্লেখিত মাপ মতোও দিতে পারেন) ময়দা, সুজি, সরিষা গুঁড়া, লবণ ও তেল ও খাবার সোডা নিন। তারপর তা ভালো করে চামচ দিয়ে বা হাত দিয়ে মিশান। হাত দিয়ে মিক্স করলে বেশি ভালোভাবে মিশবে। ভালোভাবে মিশানোর পর পানি দিন ও শক্ত খামি/ ডো এর মতো তৈরি করুন। এরপর শক্ত ডোটি আধা ঘণ্টা থেকে ৪৫ মিনিট ভেজা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখবেন। ঢেকে রাখার পর ডোটিকে কিছুটা রুটির মতো বেলুন। এবং এরপর পুড়ি/ফুচকার সাইজের করে ছোট ছোট করে কাটুন। এর পাশাপাশি তেলও গরম দিন। তেল গরম হলে ছোট ছোট করে কেটে রাখা ফুচকা গুলো গরম তেলের মধ্যে দিন।
২. ভর্তা বা পুরঃ
ভর্তা হলো যা ওই পুড়ির ভিতরে দিবেন। এই ভর্তা বা পুরই ফুচকায় মূলত স্বাদ তৈরি করে। এই ভর্তা হিসেবে ডাল বা আলু ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আপনি উভয়ই ব্যবহার করতে পারেন বা যেকোনো একটিও ব্যবহার করতে পারেন। নিচে কিভাবে এই পুর বানাবেন তা দিচ্ছি।
আলুর ক্ষেত্রে,
উপকরণঃ দুই কাপ সিদ্ধ আলু, দুই টেবিল চামচ জিরা, এক টেবিল চামচ গোলমরিচ, দুই টেবিল চামচ ধনে।
প্রথমে চুলায় দুই-একটি আলু ছিলে গরম পানিতে সিদ্ধ করুন। তারপর একটি বাটি বা কাপে নিয়ে ভর্তা করুন। ভর্তাতে প্রয়োজন অনুসারে লবণ দিন। তারপর ওই বাটিতে সিদ্ধ আলুর সাথে জিরা, গোলমরিচ ও ধনে পরিমাণ মতো নিন (উপরে উল্লেখিত পরিমাপও ব্যবহার করতে পারবেন)। তারপর সবকিছু ভালোভাবে মিক্স করে নিন। এছাড়াও আপনি চাইলে প্রথমে আলু ভর্তা না করে জিরা, গোলমরিচ, ধনে ইত্যাদি দিয়ে তারপর একসাথে ভর্তা করতে পারতেন। যেটি করতে আপনার সুবিধা হয় সেটিই করুন।
ডালের ক্ষেত্রে,
উপকরণঃ কাবুলি বুটের ডাল, জিরা ও আদা বাটা, লবণ, হলুদ, তেল, পিঁয়াজ, কাচা মরিচ ও চাট মসলা।
প্রথমে কাবুলি বুটের ডাল চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ডালগুলোতে সামান্য আদা বাটা, জিরা বাটা, লবণ, হলুদ (পরিমাণ মতো) ও সামান্য পরিমাণ তেল দিয়ে সিদ্ধ করে নিন। তারপর কিছু মরিচ ও পেয়াঁজ কুচি করে কেটে নিন। তারপর উক্ত সিদ্ধ করা ডালের মধ্যে মরিচ কুচি, পেঁয়াজ কুচি ও চাট মসলা দিয়ে মেখে নিন।
৩. তেঁতুলের টকঃ
উপকরণঃ তেঁতুল, ভাজা ধনে, লবণ, মরিচ গুঁড়া, চিনি, জিরার গুঁড়া।
প্রথমে কিছু তেঁতুলের টুকরা নিন। এবং তা ৫ থেকে ১০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে নিন। এরপর তেঁতুলের বিচি থেকে আলাদা করে তাতে জিরার গুঁড়া, মরিচের গুঁড়া, ভাজা ধনে, লবণ, চিনি দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
ফুচকা পরিবেশনঃ
এটা ওরকম বলার মতো কিছুই নয়। সবাই জানেন ও দেখেছেন ফুচকা কিভাবে পরিবেশন করে। তবুও আমি একটু ধারণা দিয়ে দিচ্ছি। ফুচকা চাইলে অনেক ভাবেই পরিবেশন করা যায়। প্রথমে ফুচকাগুলো উপরের দিকদিয়ে ফুটা করুন বা ভেঙ্গে ফেলুন। তারপর এর মধ্যে পুর বা ভর্তা দিন। এক্ষেত্রে ডালের পুর বা আলুর পুর বা উভয়ই ব্যবহার করতে পারেন। তারপর ফুচকাগুলো একটি বাটি বা প্লেটে সাজান। তেঁতুলের টকটি একটি ছোট বাটিতে নিয়ে নিন। এরপর ফুচকাগুলর উপর ডিম ছোট ছোট করে কেটে কেটে দিতে পারেন। তার সাথে সাথে চাইলে কিছু শসাও কেটে দিতে পারেন। এতে যে ফুচকার শুধু বাড়ে তাই কিন্তু নয় দেখতেও আরো সুন্দর হয়।
আপনি এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে বাসায় ফুচকা বানিয়ে দেখতে পারেন। আশা করা যায় কোনো ভুল না হলে খেতে ভালোই লাগবে। শুধু খেতেই ভালো লাগবে তা কিন্তু নয়। রাস্তার পাশে যে ফুচকা খান তার চেয়ে এই ফুচকা অনেক স্বাস্থ্যকরও।
তো এই ছিল ফুচকা ও ফুচকার মসলা বানানোর রেসিপি, পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।