পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর ঝালমরিচ ভূত জোলোকিয়ার অনেকগুলো নাম। একেক জায়গায় এর একেক নাম। একেক জায়গার মানুষ একে একেক নামে ডাকে। কেউ এই ভয়ংকর ঝালমরিচকে ডাকে বোম্বাই মরিচ, কেউ ডাকে নাগা মরিচ, কেউ ডাকে ভূত মরিচ, কেউ ডাকে ফোটকা বা পোটকা মরিচ, আবার কেউ ডাকে কামরাঙা মরিচ নামে। তবে তাকে মানুষ যে নামেই ডাকুক না কেনো, এতে ভয়ংকর ঝালের কোনো হেরফের বা উনিশ বিশ হয় না। তার ঝাল ঠিকই ভয়াবহই থাকে।
ভূত শব্দটা এসেছে মূলত ভূটানের “ভুট” থেকে। আসলে এই ভয়ংকর ঝাল মরিচের আদি জন্মভূমি কিন্তু ভূটানে। তবে ভারতের নাগাল্যান্ডের একটি প্রজাতির সাথে ব্রিড হয়ে এই হাইব্রিড ভূত জোলোকিয়ার উৎপত্তি। আবার নাগাল্যান্ডে এই ভয়ংকর ঝালমরিচটির ব্যাপক উৎপাদন হয় বলে অনেকে একে নাগা মরিচও বলে। ভূটান, ভারতের আসাম, নাগাল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কায় এই ভূত জোলোকিয়া মরিচ ব্যাপকভাবে চাষাবাদ করা হয়ে থাকে।
পৃথিবীতে মরিচের ঝাল মাপার যে স্কেল আছে তার নাম “স্কোভিল”। এই স্কোভিলের সর্বোচ্চ মাত্রা হচ্ছে “দশ”। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা হচ্ছে, ভূত জোলোকিয়ার ঝালের মাত্রা দশেরও উপরে। অর্থাৎ ঝালের মাত্রার দিক দিয়ে ভূত জোলোকিয়া মরিচ স্কোভিল স্কেলকেও ছাড়িয়ে গেছে। এই মরিচ কাঁচা অবস্থায় পুরোপুরি সবুজ, আবার পাকলে পুরোপুরি লাল টুকটুকে। লাল অবস্থায় গাছে যতো বেশি সময় থাকে, এর ঝালের মাত্রা ততই বাড়ে।
বাড়তে বাড়তে এর ঝাল অসহনীয় অবস্থায় চলে যায়। এরকম অসহনীয় ঝাল শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। মাত্রাতিরিক্ত খেলে শরীরে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে হার্ট অ্যাটাক হয়ে। তবে কচি অবস্থায় অর্থাৎ সবুজ থাকা অবস্থায় কিছু পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু এর বিচি না খাওয়াই ভালো। শুধু বাইরের সবুজ অংশটা খাওয়া যেতে পারে কাঁচা ক্যাপসিকামের মতো।
আমাদের দেশে এই ভূত জোলোকিয়া মরিচের বেশি ব্যবহার দেখা যায় চানাচুরওয়ালা, ঝালমুড়িওয়ালা, ফুচকা ও চটপটিওয়ালাদের কাছে। এরা অবশ্য এই মরিচকে বলে নাগা মরিচ বা কামরাঙা মরিচ। এই মরিচের একটা সুঘ্রাণ আছে, এই সুঘ্রাণটা মরিচ খাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করে। চানাচুর, ঝালমুড়ি, ফুচকা, চটপটি— এসবের মধ্যে এই মরিচ দিলে আকর্ষণীয় একটা ঘ্রাণ তৈরি হয়।
আর এই ঘ্রাণ চানাচুর, ঝালমুড়ি, ফুচকা, চটপটি ইত্যাদি খাওয়ার জন্য আকর্ষণ তৈরি করে। বিশেষ করে মেয়েদের। মেয়েরা বেশি এই সুঘ্রাণে বেশি প্রলুব্ধ হয়। ভূত জোলোকিয়া আগে আমাদের দেশের সিলেট জেলায় বেশি উৎপাদিত হতো। এখন অবশ্য দেশের অনেক জায়গায় এই মরিচের চাষাবাদ হচ্ছে। অনেকে বাসাবাড়ির ছাদবাগানে শখ করে এই ভূত জোলোকিয়া মরিচের চাষ করছেন।
ভূত জোলোকিয়া তথা নাগা মরিচ পরিমিত পরিমাণে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট, যা অকালবার্ধক্য রোধ করে। এছাড়া নাগা মরিচে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। মুখের ঘা প্রতিরোধে যা অত্যন্ত কার্যকরী। এই মরিচ খেলে মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন নামক হরমোন নিঃসরণ হয়। আর এই এন্ডোরফিন মস্তিষ্কের ভেতর আনন্দের অনুভূতি সৃষ্টি করে। ফলে মন-মেজাজ ভালো থাকে।
অনেকের জ্বরের পর মুখের রুচি চলে যায়। তাদের জন্য এই ভূত জোলোকিয়া হতে পারে দারুণ একটি উপায়। এই মরিচ হারানো রুচি ফিরিয়ে আনে। তবে সবকিছুরই একটা সীমা আছে। বেশি বেশি কোনো কিছুই ভালো না। তেমনি ভূত জোলোকিয়াও খুব সীমিতভাবে স্বল্প পরিমাণে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। আর দৃষ্টিনন্দন এই মরিচের গাছ অর্নামেন্টাল প্লান্ট হিসেবে লাগানোও উত্তম।
সাফিকা শাহরিন হক। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট