আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আশা করি সবাই ভালো আছেন। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আমিও ভালো আছি। আজকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব মাংসের মসলা তৈরির রেসিপি । আশা করি আপনাদের অনেক ভাল লাগবে।
মশলা কিংবা স্পাইস আমাদের সকলের নিকট সুপরিচিত একটি নাম। রান্না, প্রসাধনী কিংবা চিকিৎসাশাস্ত্র সব জায়গায় এর একচেটিয়া আধিপত্য। একসময় বিশ্ববানিজ্যের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই মশলা। প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের মধ্যে বানিজ্যের প্রথম এবং প্রধান উপকরন ছিল মশলা। এই মশলার খোঁজেই বের হয়ে আমেরিকা আবিষ্কার করে বসেন ক্রিস্টোফার কলম্বাস। এই মশলা বানিজ্যে একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রাখতে পৃথিবীতে সংঘটিত হয়েছে অনেক যুদ্ধ।
পর্তুগীজ, ফরাসী, ওলন্দাজ ও সর্বশেষ ইংরেজরা প্রবল প্রতাপে এই মশলার বানিজ্য চালিয়ে গেছে। মশলা রান্নায় আনে অনন্য স্বাদ, চিকিৎসাশাস্ত্রে ভেষজ উপাদান হিসেবে ব্যাপক আকারে ব্যবহৃত হয়, সেই সাথে প্রসাধনী ও সুগন্ধি তৈরিতেও প্রধান ও অন্যতম উপকরন হিসেবে কাজ করে। তাই একসময় এই পৃথিবীর মানুষ মশলার জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত ছিল। তো আসুন পাঠক জেনে নেয়া যাক আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক আকারে ব্যবহৃত এই মশলা কিভাবে তৈরি হয় তার প্রক্রিয়া।
মশলা কিভাবে তৈরি করতে হয়?
আমরা সবাই চাই যে খাবার আমরা বাড়িতে তৈরি করি সে খাবার খেয়ে যেন সবাই প্রশংসা করে। কিন্তু রোজ একই রকমের খাবার খেয়ে আমরা কিছুটা বিরক্ত হয়ে যাই কারন সেই খাবারের স্বাদ একই রকমের হয়। রান্নায় বৈচিত্র আনতে তাই ব্যবহার হয় নানা স্বাদের নানা রকমের বিভিন্ন পদের মশলা। এই মশলা রান্নায় আনে বৈচিত্র ও অনন্য স্বাদ। এখানে একটি মশলা তৈরির প্রক্রিয়া বর্ণিত হল যা সব ধরনের পদের সাথেই ব্যবহার করা যায়। যেকোন রান্নায় যদি এই স্পেশালভাবে তৈরি মশলা দেয়া হয় তাহলে সেই রান্নার স্বাদ অনেক অনেক গুনে বেড়ে যাবে। রান্না খুবই টেস্টি ও স্পাইসি হবে। এই মশলা একবার তৈরি করলে ২ মাস পর্যন্ত সংরক্ষন করা যাবে।
মশলাটা তৈরির জন্য প্রথমে একটি ফ্রাই প্যান নিতে হবে। এরপর নিতে হবে বড় টেবিল চামচে ২ চামচ গোটা জিরা, গোটা ধনে বড় টেবিল চামচে ৪ চামচ, গোল মরিচ বড় টেবিল চামচে ২ চামচ, মৌরি বড় টেবিল চামচে ১ চামচ, মেথি চা চামচে হাফ চা চামচ, ছোট এলাচ ৫ টা, বড় এলাচ ২ টা, দারুচিনি ৪ টুকরা, লবঙ্গ ১৬ থেকে ১৭ টা, তারাফুল ১ টি, জয়ফল ছোট একটুকরা, শাহী জিরা ২ চা চামচ, শুকনা লঙ্কা ৭ থেকে ৮ টা, তেজপাতা ৪ টা।
সব মশলা দেয়া হয়ে গেলে ফ্রাই প্যানটি গ্যাসের চুলায় বসিয়ে দিতে হবে। হালকা নাড়াচাড়া করে একটু ভেজে নিতে হবে। চুলার আঁচটা মিডিয়ামে রেখে দেড় থেকে দুই মিনিট মশলাগুলো ভেজে নিতে হবে।
দুই থেকে তিন মিনিট ভাজা হয়ে যাবার পর চুলা বন্ধ করে দিতে হবে। এরপর মশলাগুলোর সাথে দিতে হবে বড় টেবিল চামচে ২ চামচ কসুরী মেথি। কসুরী মেথি খুব ভাল করে নেড়েচেড়ে মশলা গুলোর সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার মশলাগুলো চুলা থেকে নামিয়ে খুব ভাল মত ঠান্ডা করে নিতে হবে।
এবার এই মশলাগুলোকে একটি ব্লেন্ডার এ ঢেলে নিতে হবে। এবার আরো কিছু উপাদান এর সাথে মেশাতে হবে। দিতে হবে ১ চা চামচ বিট লবণ, ১ চা চামচ সাদা লবণ, হলুদের গুঁড়া ১/২ চা চামচ, আমচুড় পাউডার ১ চা চামচ, কর্ণফ্লাওয়ার ১ টেবিল চামচ।
সব উপকরণ দেয়া হয়ে গেলে মশলাটা ব্লেন্ডিং মেশিনে খুব ভাল ও মিহি করে ব্লেন্ড কর নিতে হবে। খুব মিহি করে ব্লেন্ড করা হয়ে গেলে মশলাটা একদম প্রস্তুত হয়ে যাবে। আমিষ, নিরামিষ যেকোন রান্নায় এই স্পেশাল ভাবে প্রস্তুত মশলা ব্যবহার করা যাবে। এভাবেই নানা উপকারি ভেষজ উপাদানের মধ্যমে মশলা প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।
মাংসের মসলা তৈরির রেসিপি
সাধারনত মাংসের জন্য আলাদা বিশেষভাবে মশলা তৈরি করে নিতে হয়। মাংসে মশলা ব্যবহার করলে মাংস অত্যান্ত সুস্বাদু ও মুখরোচক হয়ে উঠে। স্পেশাল ভাবে তৈরি এই মশলা দিয়ে গরু, মুরগী, খাসি, কলিজাভুনা, ভাজি, দুম্বা বা যেকোন ধরনের মাংস রান্না করলেই তা হবে অনন্য স্বাদের, অপূর্ব ঘ্রাণের, মুখরোচক একটি আইটেম। আসুন পাঠক জেনে নেই এই জাদুকরী মাংসের মশলার রেসিপি।
উপকরণ
১) তেজপাতা- বড় সাইজের ২ টি
২) দারুচিনি- ১ ইঞ্ছি সাইজের ৮ টি।
৩) জয়ত্রী- মিডিয়াম সাইজের ২ টি।
৪) লবঙ্গ- ১৫ টি।
৫) কালো গোল মরিচ- ১ টেবিল চামচ।
৬) আস্ত মেথি দানা- ১ টেবিল চামচ।
৭) সবুজ এলাচ- ১৬ টা।
৮) কালো এলাচ- ২ টা।
৯) জয়ফল- আস্ত ১ টা
প্রস্তুতপ্রণালী
প্রথমে সবগুলো উপকরণ একটি ফ্রাইপ্যানে নিতে হবে। তেজপাতা কুঁচি কুঁচি করে দিতে হবে। দারুচিনি ও জয়ফল ও ভেঙ্গে দিতে হবে। এরপর ফ্রাইপ্যানটি চুলায় বসাতে হবে। চুলার আঁচ মিডিয়ামে রেখে ৪ থেকে ৫ মিনিট মশলাগুলো ভেজে নিতে হবে। ৪ থেকে ৫ মিনিট পর চুলা থেকে নামিয়ে নিতে হবে। এরপর সব মশলা একটি ব্লেন্ডার এ নিতে হবে। খুব ভাল ও মিহি করে মশলা গুলো ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এরপর একটি স্ট্রেইনারে মশলা গুলো ছেঁকে নিতে হবে। ছাঁকনির বাড়তি অংশগুলো আলাদা করে রেখে দিতে হবে। এভাবে ছাঁকনি দিয়ে আলাদা করার পর তৈরি হয়ে যাবে জাদুকরী মিহি মাংসের মশলা।
এই মশলা ১ কেজি পরিমান মাংসে রান্নার শুরুতে হাফ টেবিল চামচ ও রান্নার শেষের দিকে ১ টেবিল চামচ দিলে রান্নার অসাধারন সুগন্ধ ও স্বাদ পাওয়া যাবে।
আজ এ পর্যন্তই। পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।