1 কেজি চালের বিরিয়ানি রেসিপি উপকরণ

আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আশা করি সবাই ভালো আছেন। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আমিও ভালো আছি। আজকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব 1 কেজি চালের বিরিয়ানি রেসিপি উপকরণ সহ। বিরিয়ানীর কথা শুনলেই আমাদের জিভে জল আসে। সেই গরুর মাংসের বিরিয়ানীর রেসিপি দেয়ার আগে চলুন জেনে নেই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এই রাজকীয় বিরিয়ানীর ইতিহাস।

বিরিয়ানীর উৎপত্তির ইতিহাসঃ

বিরিয়ানী একটি হিন্দুস্তানী বা উর্দূ শব্দ যেটা পারসিক ভাষার “বিরিঞ্জ” শব্দটি থেকে এসেছে। পারসিক ভাষায় “বিরিয়া” বা “বিরিয়ান” বলতে কোন কিছু ভাজা বা পোড়া কে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে ১৫২৬ সাল থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত যখন মুঘলরা ভারতবর্ষ শাসন করেছে তখন মুঘল রাজকীয় রান্নাঘর থেকেই এই সুস্বাদু খাবারের উৎপত্তি। তবে এর পেছনে একটি দারুন গল্প প্রচলিত আছে।

বলা হয় একদিন রানী মমতাজ মহল সম্রাট শাহজাহান এর সাথে মুঘল সেনাদের অবস্থা পর্যবেক্ষন করতে বেরিয়েছিলেন। সৈনিকদের অবস্থা পর্যবেক্ষন করতে যেয়ে মমতাজ মহল দেখেন একি! সৈনিকরা তো ভালমন্দ খেতে পারছে না। তারা দুর্বল হয়ে পড়ছে। অনেকেই অপুষ্টির শিকার। এভাবে চললে তারা যুদ্ধ করে সাম্রাজ্য রক্ষা করবে কিভাবে! তাই মমতাজ মহল রাজকীয় রান্নাঘরে চালের সাথে মাংস মিশানোর জন্য আদেশ করলেন।

সেই সাথে ঘি ও নানা মশলা মিশানোর নির্দেশ দিলেন। তাতে যে খাবারটির উৎপত্তি হল সেনারা কোনদিন এত সুস্বাদু খাবার কল্পনাও করতে পারেনি। সেই খাবারের স্বাদের গল্প সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ল। আর এভাবেই উৎপত্তি হল সুস্বাদু, মজাদার, রাজকীয়, মুখরোচক খাবার বিরিয়ানীর। তাই বলা যায় অনিন্দ্য সুন্দরী রানী মমতাজ মহল শুধু তাজমহল তৈরিতেই প্রভাব রাখেননি অবদান রেখেছেন রাজকীয় খাবার বিরিয়ানীর উৎপত্তিতেও।

বিরিয়ানীর প্রকারভেদঃ

গোটা ভারতবর্ষজুড়ে বিরিয়ানীর নানা প্রকারভেদ দেখা যায়। সুবাস, গঠন, স্বাদ অনুযায়ী তারা নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের অধীকারি। যেমন- কাশ্মিরী বিরিয়ানী, মুঘল বিরিয়ানী, লক্ষৌ বিরিয়ানী, কলকাতা বিরিয়ানী, মুম্বাই বিরিয়ানী, হায়দারাবাদী বিরিয়ানী, ম্যাঙ্গালোর বিরিয়ানী, দিন্দিগুল তালাপ্পাকাটি বিরিয়ানী, মালাবার বিরিয়ানী, ঢাকার নবাব বিরিয়ানী, কাচ্চি বিরিয়ানী প্রভৃতি।

মাংসের বিরিয়ানী রান্নার রেসিপি / 1 কেজি চালের বিরিয়ানি রেসিপি উপকরণ

যে গরুর মাংসের বিরিয়ানী রান্নার রেসিপি এখানে দেয়া হচ্ছে মাইক্রো ওয়েভ ওভেনে তা প্রস্তুত করতে সময় লাগবে ২০-২৫ মিনিট। পোলাও ও মাংসের জন্য উপকরন গুলো আলাদা আলাদা ভাবে বিন্যাস্ত করা হল।

<

উপকরণঃ

ক) পোলাওঃ
১) পোলাওয়ের চাল = ৫০০ গ্রাম। আপনি চাইলে ১ কেজি বা আপনার ইচ্ছামত চাউল নিতে পারেন, তবে সেই অনুযায়ী উপকরন দ্বিগুণ দিতে হবে।
২) পানি = ১ লিটার।
৩) পেঁয়াজ বেরেস্তা = ১ টেবিল চামচ।
৪) আদাবাটা = ১ চা চামচ।
৫) তেজপাতা, এলাচ, দারুচিনি লং = ১টি করে
৬) কাঁচামরিচ = ৭/৮ টি
৭) বাটার অয়েল = ২ টেবিল চামচ।
৮) তেল = ৪ টেবিল চামচ।
৯) লবণ = ১/২ চা চামচ।
১০) ঘি = ১ চা চামচ।

খ) মাংসঃ

১) গরুর মাংস = ১ কেজি।
২) আদাবাটা = ১ টেবিল চামচ।
৩) রসুনবাটা = ১ চা চামচ।
৪) পেঁয়াজবাটা = ২ টেবিল চামচ।
৫) জিরা গুড়া = ১ চা চামচ।
৬) মরিচ গুড়া = ১ চা চামচ।
৭) ধনে গুড়া = ½ চা চামচ।
৮) গরম মশলার পাউডার = ১ চা চামচ।
৯) আস্ত এলাচ, দারুচিনি = ৩/৪ টি।
১০) তেল = ১ কাপ।
১১) পেঁয়াজ বেরেস্তা = ১ কাপ।
১২) টক দই = ৩ টেবিল চামচ
১৩) লবণ = পরিমাণমত
১৪) পেঁয়াজকুচি = ২ টেবিল চামচ।

প্রস্তুতপ্রণালিঃ

পোলাওয়ের চাল ধুয়ে ভিজিয়ে রাখুন আধ ঘন্টা। একটা ওভেন প্রুফ ডিশে তেল, ঘি, চাল, আস্ত এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, তেজপাতা, পেঁয়াজবেরেস্তা, লবণ মিশিয়ে ডিশের ঢাকনা খুলে ওভেনে রাখুন। মাইক্রো পাওয়ার হাই সেট করুন। ২ মিনিট চাল ভুনে নিন। ২ মিনিট পর ডিশ বের করে নিন। ভুনা চালের সাথে গরম পানি মিশিয়ে ১০ মিনিট ডিশের ঢাকনা বন্ধ করে রান্না করুন। মাঝে একবার ডিশ বের করে নেড়ে নিন।

গরুর মাংস ছোট টুকরো করে কেটে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। একটা ওভেন প্রুফ ডিশে তেল, টক দই, আদা, রসুন, পোস্তদানাবাটা, মরিচ, জিরা, গরম মশলা গুড়া, আলুবোখারা, পেঁয়াজকুচি, ঘি সব দুই টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে, ডিশের ঢাকনা খুলে ওভেনে রাখুন। ২ মিনিট মশলা ভুনে নিন। ২ মিনিট পর ডিশ বের করে মাংস মশলার সাথে মিশিয়ে দিন।

মশলার সাথে মাংস মিশিয়ে ডিশের ঢাকনা বন্ধ করে ১০ মিনিট রান্না করুন। ১০ মিনিট পর ডিশ বের করে ভাল করে নেড়ে দিন। এরপর আরো ৫ মিনিট রান্না করুন। ৫ মিনিট পর ডিশ বের করে রান্না করা পোলাওয়ের সাথে কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ, বেরেস্তা মিশিয়ে দিন। ডিশের ঢাকনা বন্ধ করে আরো ৩ মিনিট রান্না করুন। ৩ মিনিট পর ডিশ বের করে ওভেনের বাইরে ১০ মিনিট দমে রেখে দিন। ১০ মিনিট পর গরম গরম পরিবেশন করুন।

পুষ্টিমানঃ ক্যালরি ১৬৮১ কি.ক্যা, প্রোটিন ১২২.৮ গ্রাম, চর্বি ১০৯.৯ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ১০.৭ গ্রাম।
১ পরিবেশন= ১৪৯ কি.ক্যা।

পাঠক আজকের মত এতটুকুই। পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Related Posts

2 Comments

মন্তব্য করুন