সেরা দশটি স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকা, উপকারিতা ও অপকারিতা সহ

আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখা এবং শরীর সুস্থ রাখতে খাবারের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু খাবার খেতে হলে তা পুষ্টিকর হতে হবে। নতুবা ওজন বেড়ে যাওয়া, ক্ষুধামন্দা, খাবারে অরুচি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেবে। তার মানে বুঝতেই পারছেন পুষ্টিকর খাবার খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য কতটা জরুরী। যদি শরীর ও মন ভালো রাখতে চান তাহলে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এই পোস্টের মাধ্যমে জেনে নিন সেরা দশটি স্বাস্থ্যকর খাবারের নাম এবং তাদের কার্যকারিতা কি কি।

আসলে শরীর সুস্থ আর রোগমুক্ত রাখতে পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প কিছু নেই। আপনার প্রতিদিনের খাবার তালিকা প্রয়োজনীয় পুষ্টি আছে কিনা যাচাই করে তবে নির্বাচন করতে হবে। যদি আপনি ডায়েট করেন, তখন কিন্ত খাবার খাওয়া বন্ধ করা যাবে না। বরং নিয়ম মেনে পুষ্টিগুন বিচার করে প্রতিবেলায় পরিমিত পরিমাণে খাবার খেতে হবে। শরীরের ফিটনেস ধরে রাখা আর সেইসাথে মন- মেজাজ ভালো রাখা এবং কাজে মনোযোগ দেয়ার জন্যেও পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ জরুরী। ফাস্টফুড আর অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাবার শরীরের ক্ষতি করে।

এবার জেনে নেয়া যাক দশটি স্বাস্থ্যকর খাবারের নাম এবং তাদের কি কি উপকারিতা আর অপকারিতা রয়েছে।

১. দুধ

দুধকে বলা হয় আদর্শ খাবার। এতে প্রায় সকল পুষ্টিকর উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। সকল বয়সের মানুষের জন্য দুধ উপকারী খাদ্য। অনেকে আছেন দুধ খেতে পছন্দ করেন না। তারা দুগ্ধজাতীয় খাবার বানিয়ে খেতে পারেন।

অনেকে মনে করেন, দুধ খেলে ওজন বাড়ে। এ কথাটি সত্যি নয়। প্রতিদিন একগ্লাস দুধ খেলে আপনার শরীরের ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এবং খনিজের চাহিদা পূরণ হবে। আপনি অনেক অ্যাকটিভ থাকবেন আর এনার্জি পাবেন। এছাড়া দুধে রয়েছে পটাশিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন, কোলেস্টোরোল, ভিটামিনএ, বি, ডি সহ আরও অনেক উপাদান। তবে যতটুকু কোলেস্টোরল থাকে তা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়।

দুধের উপকারিতা:

১. প্রতিদিন দুধ খেলে শরীরে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে।
২. শরীরে শক্তি যোগায় এবং ক্লান্তি দূর করে।
৩. মাংসপেশি শক্ত ও মজবুত করে।
৪. রোগ- প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৫. ত্বকে এবং চুলে পুষ্টি যোগায়।

অপকারিতা:

দুধ একটি সুষম খাবার। এর কোনো অপকারিতা নেই। তবে মাত্রাতিরিক্ত দুধ খেলে-

১. হজমে সমস্যা হতে পারে।
২. অন্য খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে।
৩. শরীরে অন্যান্য উপাদানের ঘাটতি দেখা দিতে পারে কেবলমাত্র দুধের উপর নির্ভরশীল থাকলে।

২. ডিম

সুষম খাবার হিসেবে দুধের পরেই আসে ডিমের নাম। ডিম ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে খাওয়া যায়। যেমন- ডিমসিদ্ধ, ডিমভাজি, ডিমের অমলেট ইত্যাদি। এছাড়া বিভিন্ন খাবারে সহকারী উপকরণ হিসেবে ডিম ব্যবহার করা হয়। যারা বাড়ন্ত শিশু তাদের প্রতিদিন অন্তত একটি করে ডিম খেতে হবে। বাচ্চা আস্ত ডিম খেতে না পারলে ছোট ছোট ভাগে খেতে দিন। তবুও যদি না পারে তাহলে নিত্যদিনের খাবারের সাথে মিশিয়ে ডিম খাওয়াতে হবে। এই ডিম তাদের গঠন এবং উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে।

তবে যারা ওজন কমাবেন বা ডায়েট করছেন, তারা ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে কেবল সাদা অংশ খেতে পারেন। ভাজা ডিমের বদলে সিদ্ধ ডিম খাবেন। আর ডিম খেলে শরীরের দূর্বলতা কমে এবং স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

ডিমের উপকারিতা:

১. হাড়- পেশির গঠনে সাহায্য করে।
২. ক্যানসার প্রতিরোধ করে।
৩. শরীরে শক্তি যোগায়।
৪. দৈহিক গঠন দৃঢ় ও মজবুত হয়।
৫. উচ্চতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে।

অপকারিতা:

ডিমের ক্ষেত্রেও মাত্রাতিরিক্ত ডিম খেলে-

১. বদহজম হতে পারে।
২. শরীরে মেদ জমতে পারে।
৩. ডিমের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা তৈরি হতে পারে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

৩. মাছ

মাছ একটি প্রোটিন জাতীয় খাবার। শরীরে আমিষের ঘাটতি পূরণে এবং হাড় মজবুত করতে মাছের ভূমিকা রয়েছে। তরকারির সাথে মাছ বা শুধু মাছ ভাজা যেভাবেই খান, প্রতিদিনের খাবারে একবেলা অন্তত মাছ রাখতে হবে।

মাছের উপকারিতা:

১. মাছ খেলে শরীরে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয়।
২. শরীর গঠনে সাহায্য করে।
৩. বাচ্চাদের বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
৪. স্ট্রোক প্রতিরোধে সাহায্য করে।

অপকারিতা:

এবার আসি মাছ খাওয়ার উপকারিতা আর অপকারিতা সম্পর্কে কথা বলতে।

১. অতিরিক্ত মাছ খেলে শরীরে বাড়তি মেদ জমতে পারে।
২. আমিষের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
৩. ওজন বাড়তে পারে।

৪. মাংস

যদি আপনি নিরামিষ ভোজী না হন, তাহলে আপনাকে দিনে একবার খেলেও খাবারে মাছ অথবা মাংস খেতে হবে। নতুবা আপনার শরীরে আমিষের ঘাটতি দেখা দেবে। সেইসাথে শরীরে ব্যথা এবং হাড় ক্ষয় হবার মতো রোগও দেখা দিতে পারে।

উপকারিতা:

১. আপনার শরীরে আমিষের চাহিদা পূরণ করে।
২. হাড় ও শরীরের গঠন দৃঢ় করে।
৩. অস্টিওপেরোসিস বা হাড় ক্ষয় হবার মতো রোগ প্রতিরোধ করে।
৪. হাতে ও পায়ে শক্তি যোগায়।

অপকারিতা:

অতিরিক্ত মাংস খেলে-

১. পেটে চর্বি জমে যাবে।
২. শরীরের ওজন বৃদ্ধি হবে।
৩. পেটে সমস্যা দেখা দিতে পারে অতিরিক্ত আমিষ গ্রহণের কারণে।
৪. মাংস ভারী খাবার হবার কারণে হজম হতে সময় নেয় বেশি।

৫. শাক

আমাদের দেশে হরেক রকমের শাক পাওয়া যায়। প্রত্যেক সিজনেই নতুন নতুন শাক নামে বাজারে। সেগুলো রান্না করে খায় মানুষ। এক এক অন্ঞ্চলে এক এক রকম খাবারের চল থাকলেও গরম ভাতের সাথে শাক হলে তার আর কোনো তুলনাই হয় না।

এবার জেনে নেয়া যাক শাকের উপকারিতা আর অপকারিতাগুলো কি কি?

উপকারিতা:

১. শাক খেলে চোখের জ্যোতি বাড়ে এবং দৃষ্টিশক্তি ভালো হয়।
২. শাকে কোনো চর্বিজাতীয় উপাদান নেই তাই ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই।
৩. একইসাথে শরীরে পুষ্টি যোগায় এবং
৪. শরীর সুস্থ রাখে।

অপকারিতা:

১. শাক ঠিকমতো রান্না না হলে বদহজম হতে পারে।
২.অনেকের শাকে এলার্জি আছে সেসব শাক তাদের জন্য ক্ষতিকর।
৩. কিছু শাক আছে যা খেলে গলা চুলকায়। যেমন- কচুশাক।
৪. শাক ভালোমতো না ধুয়ে রান্না করলে পোকামাকড় থাকতে পারে। মাটি থাকতে পারে। এগুলো পেটে গেলে পেটের জন্য ক্ষতিকর।

৬. বাদাম

বাদাম প্রচুর উপাদেয় একটি খাবার। এটি একটি স্বাস্থ্যকর খাবারও বটে।

উপকারিতা:

১.বাদাম খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে।
২. বাদাম খেলে ওজনও কমে।
৩. শরীরে প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে।
৪. যারা ডায়েট করছেন তারা সকাল- বিকাল বাদাম খেতে পারেন।
৫. খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি যেমন- জরদা, কোরমা ইত্যাদি রান্না করতে বাদাম ব্যবহৃত হয়।

৭. সবজি

সবজি স্বাস্থ্যের জন্য সবসময়ই ভালো। ডাক্তারেরা মাছ অথবা মাংসের চেয়ে সবজি খাবার পরামর্শ দেন বেশি। সবজির আসলে উপকারীতাই বেশি।

উপকারিতা:

১. ওজন বাড়ে না।
২. সবজির কারণে মেদ জমার কোনো সম্ভাবনা নেই শরীরে।
৩. দ্রুত হজম হয়।
৪. বিভিন্নভাবে রান্না করে খাওয়া যায়। এতে খাবারের রুচি বাড়ে।
৫. শরীর, ত্বক ও চুলের গঠন সুন্দর হয়।

অপকারিতা:

১. সবজি ভালো করে না ধুয়ে খেলে পেটে সমস্য হতে পারে।
২.বারবার ধুলে এবং বেশি আঁচে রান্না করলে সবজির পুষ্টিগুণ কমে যায়।
৩. সবজি ভালোমতো রান্না না হলে খেতে স্বাদ লাগে না।

৮. ডাল

আমাদের বাঙালিদের খাবারে ভাতের সাথে ডাল থাকেই। যতবেলা ভাত, ততবেলা ডাল। আমাদের দেশে হরেক রকমের ডাল পাওয়া যায়। ডাল অবশ্যই একটি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। ডাল দিয়ে বড়া, পেঁয়াজু, খিচুড়ি ইত্যাদি রান্না করা হয়।

এবারে ডালের উপকারিতা আর অপকারিতাগুলো জেনে নেয়া যাক।

উপকারিতা:

১.ডাল প্রোটিনের খুব ভালো উৎস।
২. শীত- গরম বারো মাস ডাল খাওয়া যায়।
৩. খুব তাড়াতাড়ি পাতলা ডাল হজম হয়। রোগীদের জন্য উপাদেয় খাবার ডাল।

অপকারিতা:

১. ডাল ভালোমতো রান্না না করলে হজম হয় না।
২. কিছু কিছু ডাল ওজন বৃদ্ধি করতে পারে।
৩. রং বা রাসায়নিক মিশ্রিত ডাল শরীরের লিভার, কিডনি এবং হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে।

৯. সালাদ

সালাদ অবশ্যই একটি উপাদেয় খাবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সালাদ খাওয়া হয় একবেলার প্রধান খাবার হিসেবে।

উপকারিতা:

১. সালাদ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
২.সালাদ খাবার পর ক্যালরি খরচের জন্য অতিরিক্ত সময় দিতে হয় না।
৩. ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৪. শরীরে চর্বি জমতে পারে না।

অপকারিতা:

১. শুধু সালাদ খেলে শরীরে অন্যান্য উপাদানের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
২. ভারী খাবার হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩. শরীর দূর্বল হয়ে পড়বে।

১০. ফলমূল

ফল খেলে শরীর ভালো থাকে। সেইসাথে ত্বকের যত্নেও ফল ব্যবহার করা হয়। ফলমূল ভিটামিন এবং খনিজের খুব ভালো উৎস।

এবার জেনে নেয়া যাক ফলের উপকারিতা আর অপকারিতাগুলো কি কি।

উপকারিতা:

১. ফল খেলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা নেই।
২. ফলমূল খনিজের ঘাটতি পূরণ করে।
৩. শরীর ও ত্বক সুন্দর রাখে।

অপকারিতা:

১. বেশি ফল খেলে পেটে গ্যাস হতে পারে।
২. রাতে খাবারের পর ফল না খাওয়াই ভালো। এতে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩. অসময়ে ফল খেলে দিনের প্রধান খাবার গ্রহণে অরুচি আসতে পারে।

এই ছিলো দশটি স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কে আলোচনা। আশা করি পোস্টটি আপনাদের কাজে লাগবে। এসব খাবার নিয়ম মেনে নিয়মিত খান আর সুস্থ থাকুন।

Related Posts

2 Comments

মন্তব্য করুন